Signal Messaging App: মোস্ট ট্রেন্ডিং এই অ্যাপ নিয়ে যা যা জানা দরকার

বর্তমানে এন্ড্রয়েডের প্লেস্টোর অথবা আইফোনের অ্যাপ স্টোরের সবচে ট্রেন্ডিং অ্যাপের তালিকার দিকে লক্ষ্য করেন তাহলে দেখতে পাবেন উভয় স্টোরের দিকেই একটি অ্যাপ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সেটি হল Signal যা একটি ভয়েস ও ভিডিও কলের অ্যাপ। হটাৎ করে কেনই বা এটি আলোচনায় এল,আপনার কি এখনই এই অ্যাপ ব্যবহার করা উচিত কিনা ও অ্যাপটির সম্পূর্ণ ইনস এন্ড আউটস নিয়েই আজকের আর্টিকেল। সো লেটস ডিগ ইনটু ইট:-

হটাৎ এই অ্যাপ নিয়ে কেন এত শোরগোল?

আমাদের ওয়েব সাইটের একটি আর্টিকেল অথবা অন্য যেকোনো ভাবেই হোক জেনে গিয়েছেন যে, ওয়াটসঅ্যাপ তার প্রাইভেসি পলিসি আমূল পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। এমন পরিবর্তন যে যদি আপনি ওই পলিসির সাথে এগ্রি না করেন তাহলে আপনার বিকল্প রাস্তা খুঁজতে হবে। তাই অনেকেই বিকল্প খুঁজতে শুরু করে। এই বিকল্প রাস্তা খুঁজতে গিয়েই অনেকে সন্ধান পেয়েছে এই অ্যাপের। কেন এই পেয়েছে সেটা সামনের দিকে এগুতে থাকলে আশা করি উত্তর পেয়ে যাবেন।

কারা কারা এই অ্যাপ ব্যবহার করতে রিকমান্ড করেছে?

ওয়াটসঅ্যাপের প্রাইভেসি পলিসি নিয়ে যখন আলোচনা তুঙ্গে তখন ঐখানে আগুনে তেল ঢালার মত কাজ করেছে টেসলার সিইও ইলন মাস্কের একটি টুইট যেখানে তিনি শুধু লিখেছিলেন “Use Signal”. এর পর দেখা যায় সিগনালের সার্ভার ক্র্যাশ করে অনেক ইউজার একসাথে ওটিপি রিকোয়েস্ট করার কারনে এন্ড পরে তারা এটি ঠিক করে ফেলে। ইউরোপীয় ইউনিওন তাদের সব এম্পলয়িকে Signal অ্যাপটি ব্যবহার করতে বলছে। এহছাড়া জানুয়ারি ২০২০ এ যখন 82nd Airborne’s Task Force Devil কে মিডল ইস্টে ডেপ্লয় করা হয় তখন মার্কিন সেনাবাহিনী থেকে বলা হয়েছিল তাঁরা যেন তাদের ফোনে মেসেজিং এর জন্য SIgnal ব্যবহার করে। বিখ্যাত হুঁইসেল ব্লোয়ার এডওয়ার্ড স্নোডেনও জানিয়েছে “I use this everyday”

কিভাবে অ্যাপটির যাত্রা শুরু হয়?

২০১০ সালে Whisper System দুইটি অ্যাপ লঞ্চ করে যার মধ্য একটি হচ্ছে TextSecure অন্যটি হচ্ছে RedPhone যেখানে একটির মাধ্যমে এনক্রিপটেড মেসেজ অন্যটির মাধ্যমে ভয়েস কল করা যেত। ২০১৪ সালের দিকে এসে Whisper System থেকে এনাউন্সমেন্ট দেওয়া যে, তারা দুইটি অ্যাপেকে মার্জ করে একটি অ্যাপ পরিণত করবে যার নাম হবে Signal। Moxie Marlinspike যে কিনা Whisper System এর সিইও ছিল  এবং ওয়াটসঅ্যাপের কো ফাউন্ডার Brian Acton ২০১৮ সালে Signal Foundation প্রতিষ্টা করে যেখানে তারা ৫০ মিলিয়ন ডলার ইনভেস্ট করে এবং Signal কে Free & Open Source করে দেয়। বলে রাখা ভাল Brain Acton  ২০১৭ সালে ওয়াটসঅ্যাপ থেকে পদত্যাগ করে।  বর্তমানে Signal এর সিইও হচ্ছে Moxie Marlinspike এবং executive chairman হচ্ছে Brian Acton।

কিভাবে অ্যাপটি কাজ করে ?

অন্য দশটি মেসেসিং অ্যাপের মত এটিতেও মেসেজ, ভয়েস কল, ভিডিও কল, ডকুমেন্টস শেয়ার করা ও সবশেষ কিছুদিন আগে গ্রুপ ভয়েস কল ও ভিডিও কলের সুবিধা যুক্ত হয়েছে। সব কিছুই এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন মাধ্যমেই ইউজার থেকে ইউজারের কাছে যাবে। এই এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন এর জন্য রয়েছে Signal এর নিজস্ব প্রটোকল। অন্য এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন এর সাথে Signal এর প্রটোকলের পার্থক্য হচ্ছে এনক্রিপশনের মেটাডেটা গুলোও হাইড করা থাকে ফলে আপনার এনক্রিপডেটড মেসেজ গুলো কেউ পেয়ে গেলেও ডিক্রিপ্ট করতে পারবে না ইভেন Signal অথিরিটিও না। এটি ওপেন সোর্স হওয়াতে যে কেউ চাইলে এর সত্যতা যাচাই করতে পারবে গিটহাবে তাদের রিপোসিটোরিতে গিয়ে এবং ফারদার ডেভেলপমেন্টে সহযোগিতা করতে পারবে।

কোন ধরনের তথ্য সংরক্ষণ করে Signal ?

Signal অ্যাপে একাউন্ট খুলতে যে একটা ফোন নাম্বার অত্যবশকীয়। শুধুমাত্র তিনটি তথ্য যেগুলো হচ্ছে ফোন নাম্বার  ও যে টাইম এন্ড ডেইটে একাউন্ট ক্রিয়েট করা হয়েছে । অনেক দেশে এমন কি আমাদের দেশেও একটি সিম কিনার জন্য জাতীয় পরিচয় পত্র দেওয়া লাগে তাই ফোন নাম্বার দেওয়াও অনেকের অনুচিত মনে হতে পারে। যদিও তারা কোনো টেক জায়ান্ট এর অধীন না থাকায় অথবা Signal Foundation নন প্রফিট হওয়াতে তথ্য বিক্রি করবে এমন সম্ভবনা ক্ষীণ।  অন্যদিকে চ্যাটের ব্যাকাপ শুধু মাত্র অফ লাইনে আপনার ডিভাইসেই এনক্রিপডেটড অবস্থায় সেভ থাকবে তাঁদের নিজস্ব সার্ভার কিনা থার্ড পার্টি ক্লাউড স্টোরেজেও না তাই আপনার ফোন হারিয়ে গেলে সব চ্যাট হিস্টোরিও হারিয়ে যাবে। প্রোফাইল ফটো , নেইম, কন্টাক লিস্ট কিংবা গ্ৰুপ মেম্বারের সংখ্যা ইত্যাদি তাদের সার্ভারে সেভ করা রাখা হয় না। অন্যদিকে পারমিশনের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় একাউন্ট খোলার সময় শুধুমাত্র দুইটি পারমিশনের দরকার হয় একটি হচ্ছে ফোন অন্যটি কন্টাকের। এইখানে একটি বিষয় না বললেই নয় সেটি হচ্ছে একাউন্ট খোলার সময় দেখা যায় OTP অটোমেটিক্যালি ভেরিফাই হয়ে যায়  অর্থাৎ আপনার ম্যানুয়ালি কপি পেস্ট করে দিতে হচ্ছে না তাই অনেকের মনে প্রশ্নের উদ্বেক হতে পারে(যারা বিষয়টি জানেন না) তাহলে কি আমার মেসেজ পারমিশন নেওয়া ছাড়ায় কিভাবে এটি সম্ভব হচ্ছে? মূলত এই প্রসেসটি হ্যাসেল ফ্রি করার জন্য গুগল থেকে একটি স্পেশাল চ্যানেল প্রোভাইভ করা হয় থাকে ভেভেলপারদেরকে যা দিয়ে তারা এই ধরনের মেসেজ গুলো রিড করতে পারবে কিন্তু মেইন মেসেজ রিড করার কোনো সুযোগ নেই।

শুধু মুখের কথায় তো সব নয় যতক্ষণ না পর্যন্ত থার্ড পার্টি কেউ সিকিউরিটি অডিট না করে। ২০১৬ সালে এইরকম একটি অডিট চালানো হয়েছিল যাতে মেজর কোনো ফ্লস পাওয়া যায়নি। ২০১৯ সালে এটি আবার রিভাইস করা হয় তখনও কোনো সিকিউরিটি হোলস পাওয়া যায়নি। বিস্তারিত এইখানে। অন্যদিকে বিজ্ঞাপন মুক্ত অ্যাপ হওয়ার কারনে ইউজারদের কাছ থেকে ডোনেশন নেওয়ার পথ রেখেছে।

Signal এর গুরুত্বপূর্ণ ফিচারগুলো ?

প্রথমেই বলি রাখি এটি একটি মূলত সকলের জন্য প্রাইভেসিকে ফোকাস করে বানানো এপ্লিকেশন। টেলিগ্রামও প্রাইভেসি সেন্ট্রিক এপ্লিকেশন হলেও টেলিগ্রাম অনেক বেশি ফিচার্স অফার করে যা মূলত টেক এনথুজিয়াস্ট ব্যতীত সাধারণ আম জনতার জন্য দরকার নেই। তাই Signal এখনও পৰ্যন্ত তেমন ফ্যান্সি কোনো কিছু পাবেন না তাও উল্লেখযোগ্য কিছু ফিচার হচ্ছে-

  1. এটি একটি ক্রস প্লাটফর্ম অ্যাপ এন্ড্রয়েড, আইওএস, উইন্ডোস এর পাশাপাশি লিনাক্সেও এটি সাপোর্টেড।
  2. Disappearing মেসেজের সুবিধা রয়েছে।  টাইম সেট করা যাবে ৫ সেকেন্ড থেকে ১ সপ্তাহ পর্যন্ত।
  3. আপনি যে ডিভাইসে মেসেজ পাঠানোর কথা আদৌ সেই ডিভাইসে পাঠাচ্ছেন কিনা তা ভেরিফাই করে নিতে পারবেন।
  4. সেন্ট মেসেজ উভয় দিক থেকে আনসেন্ট  করার সুযোগ আছে ।
  5. Relay Call নাম একটি ফিচার রয়েছে যা দ্বারা Signal সার্ভারে আপনার ফোনের আইপি এড্রেস পাঠানো ছাড়ায় কল করা যাবে। যদিও এতে কল কোয়ালিটি কমে যাওয়ার পসিবিলিটি আছে।
  6. একজনের চ্যাট থ্রেড ডিলেট করে দিলে উভয় পাশ থেকেই সব মেসেজ পার্মানেন্টলি মুছে যাবে।
  7. বিল্ট ইন অ্যাপ লক রয়েছে।
  8. স্ক্রিনশট নেওয়া অফ করে দেওয়া যায়।
  9. টাইপিং ইন্ডিকেশন ও রিড রিসিপ্ট অফ করে রাখা যায়।
  10. গ্ৰুপে হায়েস্ট ১৫০ জন মেম্বার থাকতে পারবে।
  11. যেকোনো মিডিয়া পাঠানোর সময় একবার দেখার পর পর ঐ মিডিয়া ডিলেট হয়ে যাবে সেই অপশন ও রয়েছে।
  12. হায়েস্ট 6Mb Image,25Mb GIF100Mb, Video100, Mb Audio, 500Mb Uncompressed Video, 100Mb Document পাঠানো যাবে। জানুয়ারির ১২ তারিখে এটাচমেন্ট সাইজ লিমিট তাদের গিটহাব থেকে নেওয়া। ভবিষ্যতে এর পরিধি বাড়তে পারে।

এখন পর্যন্ত সব ঠিকটাক থাকলেও পরবর্তিতে ইউজার সংখ্যা বাড়তে থাকলে অথবা অন্য কোনো টেক জায়েন্ট যদি কিনে ফেলে তাহলে দৃশ্যপট পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে ততদিন পর্যন্ত এনজয় করতে থাকুন। গুডবাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here