অ্যালফাবেট এবং গুগল | দুটির ভেতর পার্থক্য কোথায়?

সফটওয়্যার থেকে শুরু করে সেলফ-ড্রাইভিং গাড়ি বর্তমান সময়ে এইসবই তৈরি করে এমন একটি বিশাল কোম্পানি হল গুগল। ১৯৯৭ সালে ব্যাকরাব নামে সার্চইঞ্জিন হিসেবে শুরু হওয়া গুগল এখন কতটা বড় অতা আমাদের চোখের সামনে বাস্তব! তবে ২০১৫ সালে গুগল বিভক্ত হয়ে যায় এবং কতগুলো সাবসিডিয়ারি কোম্পানিগুচ্ছে পরিণত হয়, যার মূলে সৃষ্টি হয় একটি প্যারেন্ট তথা মূল কোম্পানি ‘অ্যালফাবেট’। তো ব্যাপারটা হল গুগলও এখন কোন এক কোম্পানির অধীনে যার নাম ‘অ্যালফাবেট’। তবে এরকম না যে অ্যালফাবেট থেকে গুগল এর সৃষ্টি, মূলত গুগল থেকেই অ্যালফাবেট এর সৃষ্টি। আজকের আর্টিকেলে আপনি উত্তর পাবেন, গুগল তুমি কার?

এরকম না যে অ্যালফাবেট থেকে গুগল এর সৃষ্টি, মূলত গুগল থেকেই অ্যালফাবেট এর সৃষ্টি। আজকের আর্টিকেলে আপনি উত্তর পাবেন, গুগল তুমি কার?

তো গুগল এবং তার সাথে সাবসিডিয়ারি আরও কোম্পানি যার মূলে আছে একটি প্যারেন্ট হোল্ডিং কোম্পানি অ্যালফাবেট। ন্যাসড্যাক স্টক এক্সচেঞ্জে কোম্পানিটির পরিচয় GOOG হিসেবে। গুগল নাম এর সাথে মিল রেখেই স্টক এক্সচেঞ্জ তথা শেয়ার বাজারে অ্যালফাবেট এর এই শর্ট ফর্ম ব্যবহার করা। আজকের এই আর্টিকেলে আমি মূলত আপনাদের জানাতে চলেছি অ্যালফাবেট এর অধীনে গুগল সহ আরও সাবসিডিয়ারি কোম্পানি সম্পর্কে।

গুগল এর কো-ফাউন্ডার লেরি পেজ এবং সারজে ব্রিন এই দুই বন্ধু মিলেই অ্যালফাবেট পরিচালনা করছেন,লেরি পেজ সিইও এবং সারজে ব্রিন প্রেসিডেন্ট। আর যেহেতু তারা দুজনে মিলে একটি বিশাল হোল্ডিং কোম্পানি পরিচালনা করছেন, তো সেইকারনে তারা আলাদা আলাদা সাবসিডিয়ারি কোম্পানিগুলোর জন্যেও আলাদা সিইও তথা প্রধান নিয়োগ করে দিয়েছেন; যাদের দায়িত্ব সেই কোম্পানিটির দায়িত্ব খুব ভালোভাবে    পরিচালনা করা।

গুগল

অ্যালফাবেট এর সবচাইতে বড় সাবসিডিয়ারি হল গুগল। মূলত গুগল সার্চ ইঞ্জিন এবং এই সম্পর্কিত নানান সার্ভিস,যেমনঃ অ্যাডসেন্স,ইউটিউব,ম্যাপ্স ইত্যাদি নিয়ে গুগল গঠিত। তাছাড়াও এন্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম এবং এই এন্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম সম্পর্কিত সকল ডিভিশন,যেমনঃ গুগল প্লে স্টোর এসব একান্ত গুগল এর মালিকানাধীন। অ্যালফাবেট কোম্পানির অধীনে যত কর্মকর্তা কর্মচারী কাজ করে , তার ১০ জনের ভেতর ৯ জনই শুধু গুগলের জন্য কাজ করে। গুগল এর সিইও হচ্ছেন সুন্দার পিচাই,তিনি আগে গুগল এর চিফ অব প্রোডাক্ট ছিলেন বর্তমানে তিনি অ্যালফাবেট এর সবচেয়ে বড় সাবসিডিয়ারি এর সিইও তথা চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার এর ভুমিকা পালন করছেন। অ্যালফাবেট এর আরও সাবসিডিয়ারি কোম্পানি আছে যদিও তাদের নামের সাথেও গুগল ওয়ার্ডটি আছে তবে তারা এই গুগল থেকে আলাদা ডিভিশন। তবে অ্যালফাবেট পুনর্গঠন এর সময় এই নামগুলোও বদলে ফেলা হয়েছে; কোনটির নাম এখনও বদলে ফেলা হয়নি।

ফাইবার

ফাইবার বা গুগল ফাইবার হল অ্যালফাবেট এর হাইস্পীড ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার কোম্পানি। যদিও এই ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার কোম্পানির প্রাপ্তিসিাধ্য পৃথিবীর কেবল হাতেগোনা কয়েকটি শহরে। গুগল ফাইবার থেকে ব্যবহার কারিরা ইন্টারনেট এবং টেলিভিশন সংযোগ নিতে পারে। তবে অ্যালফাবেট তাদের এই বিজনেস থেকে তেমন বেশি লাভ করতে পারে না; তবুও অ্যালফাবেট এর ইচ্ছা তারা এই সেক্টরে কাজ করবে তাই তারা করছে; সব সময় আর লাভের চিন্তা করলে তো হবে না।  গুগল ফাইবার সমসময়ই খুবই চিপ মূল্যতে তার ব্যবহারকারীদের অনেক উন্নত হাইস্পীড ইন্টারনেট দেয়ার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে।

নেস্ট

স্মার্ট হোম ডিভাইস নির্মাতা কোম্পানি নেস্ট; এটিও অ্যালফাবেট এর একটি সাবসিডিয়ারি কোম্পানি। এটি মূলত একটি হার্ডওয়্যার কোম্পানি যারা স্মার্ট হোম ডিভাইস তৈরি করে,যাকে বলা যায় ইন্টারনেট অব থিংস। নেস্ট স্মার্ট সিকিউরিটি ক্যামেরা,ইনডোর আউটডোর লক সিস্টেম, স্মোক পাশাপাশি কার্বন মনোক্সাইড ডিটেক্টর ইত্যাদি ডিভাইস তৈরি করে। ২০১৪ সালে ৩.২ বিলিয়ন ডলার খরচ করে একে কিনে নেয়া হয়।

ক্যালিকো

অ্যালফাবেট এর আরেকটি সাবসিডিয়ারি হল ক্যালিকো তথা ক্যালিফোর্নিয়া লাইফ কোম্পানি। এটি অ্যালফাবেট এর অধীনে পরিচালিত একটি মেডিকেল গবেষণামুলক প্রতিষ্ঠান। তারা সাধারণত জেনেটিক্স,মানুষের বয়স ভিত্তিক নানা অবাক করা রোগ, এসবের প্রতিষেধক ইত্যাদি নিয়ে কাজ করছে। তাদের মূল কাজের বিষয় বায়োমেডিকেল। ২০১৩ সালে অ্যালফাবেট এটি আধিগ্রহন করে।

ভেরিলি লাইফ সায়েন্স

ভেরিলি লাইফ সায়েন্স তাদের আরেকটি সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান; বলতে গেলে  আরেকটি মেডিকেল রিসার্চ ব্রাঞ্চ । মূলত এটি পুরোপুরি ভাবে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। এবং এর মূল কাজ হল পাবলিক হেল্‌থ মনিটর করা। ভেরিলি লাইফ সায়েন্স অনেক বড় বড় সহযোগী প্রতিষ্ঠান এর সাথে কাজ করে নানাভবে তাদের মেডিকেল রিসার্চ পরিচালনা করছে। ভেরিলি অন্যান্য নানান কোম্পানি এর সাথে নিজেদের পার্টনারশিপও পরিচালনা করে; যেমন এমন কিছু কোম্পানি হল GlaxoSmithKline, Galvani Bioelectronics ইত্যাদি। ভেরিলি একটি ফ্রেঞ্চ ঔষধ কোম্পানি স্যানোফি এর সাথে কাজ করে Onduo নামক একটি রিসার্চ পরিচালনা করছে, যেটি মূলত ডায়াবেটিক রোগীদের নিয়ে।

বোস্টন ডাইন্যামিকস

এমন কিছু রোবট যা দেখতে চতুষ্পদ জন্তুর মতন, লাথি দিলে পরে না সুন্দর ভাবে হেটে চলে ছোট-বড় কাজ করতে পারে এমন সব রোবট তৈরি এবং এর রিসার্চ এর প্রতিষ্ঠান হল বোস্টন ডাইন্যামিকস। এমআইটি থেকে বের আসার পর অ্যালফাবেট একে কিনে নেয়। হ্যান্ডল,স্পটমিনি, অ্যাটলাস এবং স্পট এর মতন রোবট তৈরি করে বোস্টন ডাইন্যামিক রোবট ইন্ডাস্ট্রি এর এক নতুন অধ্যায় সূচনা করেছে। এর মূল স্লোগান হল ‘Changing your idea of what robots can do।’

আরও কিছু

অ্যালফাবেট এর আরও কিছু সাবসিডিয়ারি আছে আর এগুলো হল এক্স ডেভেলপমেন্ট ,এলএলসি; যারা কিনা প্রথমেই উল্লেখ করেছিলাম সেলফ-ড্রাইভিং গাড়ি নিয়ে কাজ এবং গবেষণা করে থাকে। এমনকি গুগল বালুন ইন্টারনেট প্রোজেক্টও তাদের তৈরি! ক্যাপিটালজি গুগল এর আরেকটি সাবসিডিয়ারি; এরা ছোট ছোট স্টার্টআপ এর পিছনে বিনিয়োগ করে এবং তাদের বড় হতে সাহায্য করে। স্ন্যাপচ্যাট,গ্লাসডোর,ডুওলিঙ্গ এর মত স্টার্টআপ ক্যাপিটালজি থেকে বিনিয়োগ পেয়েছিল। গুগল ভেঞ্চারস এখন জিভেঞ্চারস অ্যালফাবেট এর আরেকটি বিনিয়গকারি প্রতিষ্ঠান , তারা বিনিয়োগ করে মূলত বড় এবং চলমান বিভিন্ন কোম্পানিতে, এসবে বিনিয়োগ এর মাধ্যমে অ্যালফাবেট সেখানে এক প্রকার পার্টনার এর পর্যায়ে যায়। জিভেঞ্চারস এর দ্বারা অ্যালফাবেট উবার, মিডিয়াম,স্ল্যাক এর মত কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here