ল্যাপটপ কেনার আগে আবশ্যকীয় প্রস্তুতি

ডিজিটাল বাংলাদেশ বলেন কিংবা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলাকে টার্গেট করেন, বর্তমানে আপনাকে স্মার্ট এবং কাজের ক্ষেত্রে পটু হতে হলে অবশ্যই কম্পিউটার শিক্ষায় পারদর্শি হতে হবে। অন্ত্যতপক্ষে কম্পিউটারের বেসিক কাজগুলো সম্পর্কে আপনার আইডিয়া না থাকলে বর্তমানে ছোটখাট পদেও চাকুরি পাওয়া বেশ মুশকিল। আর কম্পিউটারের বেসিক কাজগুলোকেও নিয়মিত চর্চায় রাখতে আপনার নিজের একটি কম্পিউটার থাকা চাই । আর বর্তমানে এবং অতীতেও ডেক্সটপ কম্পিউটারের থেকে ল্যাপটপ কম্পিউটারের প্রতি মানুষদের আগ্রহ বেশি ছিলো। ল্যাপটপ কম্পিউটার তুলনামুলকভাবে বেশ ছোট এবং হালকা হয়ে থাকে যার কারণে একে আপনি টেবিলের পাশাপাশি কোলে করে, বিছানায় নিয়ে, চলতি পথেও ব্যবহার করতে পারবেন। আর ল্যাপটপ কেনার সময় আমরা সবসময়ই কনফিউজে থাকি যে ল্যাপটপ কেনার সময় কোন বিষয়গুলোর উপর লক্ষ্য রাখতে হবে। আজকের এই পোষ্টে আমি সেই বিষয়গুলো নিয়েই সহজ ভাষায় নিজের মতো করে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করবো। আর বলাবাহুল্য যে আমি এই পোষ্টটাও ল্যাপটপে টাইপ করছি!

আপনার উদ্দেশ্য জানুন এবং মনে রাখুন

ল্যাপটপ পুরাতন, সেকেন্ড হ্যান্ড কিংবা নতুন যে অবস্থারই কিনেন না কেন কেনার আগে আপনার ল্যাপটপ কেনার উদ্দেশ্যকে ঠিক করুন এবং সেটাকে মনে রাখুন। আপনি যদি মনে করেন যে বাজেটের মধ্যে অফিসের কাজকর্ম এবং ব্যক্তিগত গানবাজনার জন্য কিনবেন তাহলে সেভাবে কিনুন। আবার যদি মনে করেন যে প্রফেশনাল গেমিংয়ের উদ্দেশ্যে ল্যাপটপ কিনবেন তাহলে সে ধরণের ল্যাপটপ কিনতে হবে। আর ল্যাপটপ আপনি কিন্তু বেশ দীর্ঘসময়ের জন্য ব্যবহার করবেন আর ল্যাপটপ কেনার পর সেটায় আলাদা করে র‌্যাম, গ্রাফিক্স কার্ড আপনি কিন্তু চাইলেই লাগাতে পারবেন না তাই কেনার সময় সঠিক মানের সঠিক কনফিগারেশনে ল্যাপটপ কিনুন। আর বাজেটে থাকলে একটু বেশি কনফিগারেশনের কিনে নিন তাহলে আগামী বছরগুলোতে ল্যাপটপটিকে বেশ স্বাচ্ছন্দেই ব্যবহার করতে পারবেন।

আপনার বাজেট এবং বিক্রেতার বাজেট!

বর্তমানে খুব সস্তাতেই আপনি ল্যাপটপ পেয়ে যাবেন। সেদিন আমি নিজে দেখলাম যে ১৬ হাজার টাকা থেকে IDB ভবনে ল্যাপটপ বিক্রি হচ্ছে, আর যাই করেন সেটায় গেমিং করা যাবেনা সেটা তো বুঝেনই! নতুন, পুরাতন কিংবা সেকেন্ডহ্যান্ড যে টাইপেরই আপনি ল্যাপটপ কিনতে যান না কে আপনার উদ্দেশ্যের সাথে আপনার বাজেটের দিকটাও খেয়াল রাখতে হবে। আপনার যদি গেমিং উদ্দেশ্য হয় তাহলে আপনি ৪০ থেকে শুরু করে কয়েক লাখ টাকারও ল্যাপটপ পেয়ে যাবেন কিন্তু এখন কথা হচ্ছে আপনার বাজেট অনুযায়ী সঠিক ব্রান্ডের সঠিক কনফিগারেশনের ল্যাপটপটি কিনে নিতে হবে। যেমন আপনার অফিসের কাজ এবং ব্যাক্তিগত টুকিটাকি কাজের জন্য ল্যাপটপ প্রয়োজন, এক্ষেত্রে দামি ও হেভি গ্রাফিক্স সম্পন্ন ল্যাপটপ আপনার প্রয়োজন হবে না অন্যদিকে আপনি যদি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত বিনোদন যেমন গান শোনা মুভি দেখার জন্য ল্যাপটপ কিনতে চান তাহলে আপনার বাজেটের মধ্যে সেরা হার্ডডিক্স সম্বলিত ল্যাপটপটি কিনতে হবে। আর এখানে বিক্রেতার বাজেট বলতে আমি আপনাকে বুদ্ধি খাটাতে বলেছি। একটি শপে গিয়েই ল্যাপটপ না কিনে আশেপাশের সকল শপে একটু ঘুরে ফিরে দামগুলো নোট করে তারপর কিনুন, তাহলে শপভেদে আপনার পছন্দের ল্যাপটপটি হাজারখানেক কমে পেতে পারেন!

ব্র্যান্ড!

ল্যাপটপে কিন্তু ব্র্যান্ড জিনিসটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এটা কোনো ডেক্সটপ কম্পিউটার না যেখানে আপনি আলদা পার্টসপাটি এনে নিজের মতো করে কাস্টম একটি পিসি বিল্ড করলেন। একটি ল্যাপটপের কিবোর্ড থেকে শুরু করে ছোট ছোট পার্টস পর্যন্ত সবই একটি ব্র্যান্ডের হয়ে থাকে, তাই ল্যাপটপ নতুন বা পুরতান কেনার সময় সেটার ব্র্যান্ড সম্পর্কে আপনার সচেতন হতে হবে। আর এখানে ল্যাপটপের বেলায় ব্রান্ড মানে শৌখিন বা show-off করার মতো কোনো বিষয় না। ল্যাপটপের এক একটি ব্রান্ডের এক এক ধরণের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন অ্যাপলের ম্যাকবুকগুলোতে আপনি সেরা পোর্টেবিলিটি পাবেন ঠিক তেমনি Razer এর আল্ট্রাবুকগুলোতে পাবেন সেরা গেমিং এক্সপেরিয়েন্স। তাই কেনার সময় আপনার বাজেটের মধ্যে সঠিক ব্রান্ডটি সিলেক্ট করতে হবে।

স্ক্রিন সাইজ, ওজন এবং পোর্টেবিলিটি


এবার যে বিষয়টির উপর লক্ষ্য রাখবেন সেটা হচ্ছে স্ক্রিণ সাইজ, ল্যাপটপটির ওজন এবং এটি কতটুকু পোর্টেবল সেটায়। আপনি বাজারে ১০ ইঞ্চি থেকে শুরু করে ২২/২৪ ইঞ্চি এবং তারও বেশি সাইজের ডিসপ্লেযুক্ত ল্যাপটপ পাবেন। আর একটি ল্যাপটপ যত বেশি বড় সাধারণত সেই ল্যাপটপটি ততবেশি ওজনদার হয়। আর বড় ওজনদার ল্যাপটপগুলোতে বেশি পোর্টিবিলি পাওয়া যায় না তাই আপনার প্রয়োজন মাফিক এই বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে। মনে রাখবেন স্ক্রিণ সাইজ যত ছোট হবে ল্যাপটপটির চার্জ তত বেশি থাকবে এবং CPU থেকে বেশি পাওয়ার পাবেন। কারণ ছোট স্ক্রিণের রেজুলেশন কম হয়ে থাকে।

ল্যাপটপের ধরণ

আগে ল্যাপটপ বলতে শুধুমাত্র ল্যাপটপকেই বোঝানো হতো কিন্তু বর্তমানে ল্যাপটপের পরিধি ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয়েছে। তবে নোটবুক, আল্ট্রাবুক, ম্যাকবুক যতই প্রকারভেদ থাকুক না কেন ল্যাপটপ মূলত দুই প্রকার। একটি হচ্ছে ট্রাডিশনাল ল্যাপটপ আরেকটি হচ্ছে হাইব্রিড ল্যাপটপ। ট্রাডিশনাল ল্যাপটপ হচ্ছে নরমাল ল্যাপটপ যেখানে ডিসপ্লে এবং কিবোর্ড সংযুক্ত করা থাকে। অন্য দিকে হাইব্রিড ল্যাপটপগুলোকে কিবোর্ড বিচ্ছিন্ন করা যায় এবং টাচস্ক্রিণের মাধ্যমে সেটাকে ট্যাবলেট আকারে ব্যবহার করার ব্যবস্থা রয়েছে। বলা বাহুল্য যে হাইব্রিড ল্যাপটপগুলোর দাম একটু বেশি।

র‌্যাম এবং প্রসেসর

যে উদ্দেশ্যেই বা যে কাজের জন্য আপনি ল্যাপটপ কিনেন না কেন সবসময় চেষ্টা করবেন যে বাজেটের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে ল্যাপটপের র‌্যাম এবং প্রসেসরকে কিনতে। কারণ ল্যাপটপে আপনি পরবর্তীতে আলাদাভাবে র‌্যাম যুক্ত করতে পারবেন না এবং চাইলেই ল্যাপটপের প্রসেসর পাল্টাতে পারবেন না। অনেক ডেডিকেটেড ল্যাপটপগুলোতে র‌্যামকে গ্রাফিক্স কার্ডের মেমোরি হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে তাই বর্তমান যুগের প্রেক্ষাপটে ৪ গিগাবাইট র‌্যামের নিচের ল্যাপটপ না কেনাই উত্তম আর বেসিক হলো ৮ গিগাবাইট র‌্যামের ল্যাপটপ।

স্টোরেজ

র‌্যাম এবং প্রসেসরের মতোই ল্যাপটপের স্টোরেজের দিকেও নজর দেওয়া উচিত। তবে আপনি চাইলে সহজেই ল্যাপটপে আলাদাভাবে পোর্টেবল হার্ডডিক্স বা SSD লাগিয়ে নিতে পারবেন, তবে তাই বলে একদমই কম স্টোরেজের ল্যাপটপ না কেনাই উত্তম। আপনার ল্যাপটপে HDD কিংবা SSD বা কম্বো থাকবে কিনা সেটাও সিদ্ধান্ত করে নিন।

ব্যাটারি লাইফ

বর্তমান যুগে ল্যাপটপ বিক্রির অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে এর ব্যাটারি লাইফ। যে ব্রান্ড যত বেশি ব্যাটারি লাইফ দিতে পারছে সেটার ল্যাপটপগুলো বেশি বিক্রিত হচ্ছে। আপনারও কাজের উপর ভিক্তি করে ল্যাপটপের ব্যাটারি লাইফের দিকে খেয়াল রাখা উচিত। তবে গেমিং, গ্রাফিক্সের কাজ বা হেভি কাজ করতে গেলে ব্যাটারি লাইফের দিকে একটু ছাড় দেওয়া যেতে পারে।

ওয়ারেন্টি এবং সার্পোট

এই ক্ষেত্রেও ব্রান্ডের ভূমিকা রয়েছে। এক এক ব্রান্ডের ওয়ারেন্টি পলিসি ভিন্ন রকম। আবার শপ ভিক্তিক আলাদা আলাদা সার্পোটও রয়েছে। যেমন একটি শপে আপনি ২ বছর পর্যন্ত ফ্রি সার্ভিসিং সুবিধা পাবেন আবার আরেকটায় আড়াই বছর পর্যন্ত পেলেন ইত্যাদি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here