ধরা খেল ইন্টেল, সিপিউ টেস্টিঙ্গে কারচুপি

চুরি করে ধরা পরল ইন্টেল

আগামিকাল অফিসিয়ালি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড রিলিজ হতে যাচ্ছে ইন্টেলের ৯ম জেনারেশনের কোর প্রসেসর সিরিজ। আপাতত টপ টিয়ের আনলকড প্রসেসর ইন্টেল বাজারে আনছে। প্রসেসরগুলো হচ্ছে ৮ কোর ১৬ থ্রেডের Core I9 9900K, ৮ কোর ৮ থ্রেডের Core I7 9700K এবং ৬ কোর ও ৬ থ্রেডের Core I5 9600K। নতুন প্রসেসর যেহেতু রিলিজ হচ্ছে তাই কোম্পানি থেকে অফিসিয়াল রিলিজের আগে সব সময়ই একটি অফিসিয়াল বেঞ্চমারক রেজাল্ট প্রকাশ করা হয়। এই রেজাল্টে সাধারণত বিভিন্ন গেম ও বেঞ্চমারক সফটওয়্যারের ফলাফল দেখানো হয়। ইন্টেল এই বেঞ্চমারক টেস্ট করার জন্য দায়িত্ব দেয় প্রফেশনাল টেস্টিং কোম্পানি Principled Technologies কে। কিছুদিন আগেই বের হয় তাদের পক্ষ থেকে অফিসিয়াল ইন্টেল I9 9900K এর রেজাল্ট। তার সাথে প্রকাশ করা হয় প্রতিপক্ষ এ এম ডির রাইজেন 2700X প্রসেসরের রেজাল্টের সাথে কম্পারিজন ফলাফল। ফলাফলে দেখা যায় I9 9900K প্রসেসর এ এম ডির প্রসেসর থেকে গেম ভেদে ৩০ থেকে ৫০% এগিয়ে। তাহলে তো ইন্টেলের জন্য অবশ্যই ভালো মার্কেটিং হবার কথা।  কিন্তু আমরা সহ প্রায় সবাই এমন অবাস্তব রেজাল্ট মেনে নিতে অপারগতা জানাই।

এরপরেই শুরু হয় এর পিছনে চুলচেরা তদন্ত। আর তদন্তে বেরিয়ে আসে বিভিন্ন ধরণের তথ্য যা থেকে প্রমাণিত হয় ইন্টেল আসলে Principled Technologies এর টেস্টারদের পেম্যান্ট করেছিল রাইজেনের থেকে ইন্টেল I9 9900K ফাস্টার প্রমাণ করার জন্য। আপনারা হয়ত ইতিমধ্যে জেনে গেছেন ইন্টেলের জন্য তারা আসলে কি কি করেছে, কিন্তু যারা জানেন না তাদের জন্যই আজকের এই আর্টিকেল। মূল আলোচনায় যাবার আগে দেখে নেই টেস্ট করা দুটি প্রসেসর ইন্টেল Core I9 9900K ও রাইজেন R7 2700X এর স্পেসিফিকেশন।

Specification

Processor Model Core I9 9900K R7 2700X
Core/Thread Count 8/16 8/16
Base Clock Speed 3.6 GHz 3.7 GHz
Boost Clock Speed 4.7 GHz 4.3 GHz
Memory Support 64 GB / 2666 MHz 64 GB
Included Cooler No Cooler Wraith Spire LED
TDP 95 Watt 105 Watt
Price 500 USD 300 USD

মূল কারচুপি

প্রিন্সিপাল্ড টেকনোলজিস অফিসিয়ালি বলেছে তারা একেবারে প্রতিটি সিস্টেমের জন্য অপ্টিমাইজড সেটাপ তৈরি করে তার মধ্যে বেঞ্চমারক করেছে। কিন্তু তদন্ত করে জানা গেছে মূলত তিনটি কি পয়েন্টে তারা কিছুটা জালিয়াতি করেছে। আপনার মূল রিপোর্টটি ডাউনলোড করে নিতে পারেন এখানে ক্লিক করে। চলুন দেখে নেই কি কি পয়েন্টে ডিসএডভান্টেজ পেয়েছে এ এম ডির প্রসেসর।

হার্ডওয়্যার ডিসএডভান্টেজ

হার্ডওয়্যারের মধ্যে দুই জায়গায় ডিসএডভান্টেজ দেখা গিয়েছে। সেটি হচ্ছে ব্যাবহার করা মেমোরি আর প্রসেসর কুলার। এ এম ডির টেস্ট বেঞ্চে ইউজ করা হয়েছে পুরাতন করসেয়ার র‍্যাম মডিউল যা রাইজেনের জন্য একেবারেই অপ্টিমাইজড না। এখন করসেয়ার, জি স্কিল সহ বিভিন্ন ব্র্যান্ড রাইজেন অপ্টিমাইজড র‍্যাম রিলিজ করলেও করসেয়ার ভেঞ্জেন্স র‍্যাম এ এম ডি অপ্টিমাইজড নয়। যার কারণে র‍্যামের দিক থেকে শুরুতেই ডিসএডাভন্টেজে ছিল এ এম ডি (র‍্যামের পরবর্তী অংশ দ্বিতীয় অংশে)।

উপরের ছবি দেখে হয়ত বুঝতে পেরে গেছেন আমি এখন কি নিয়ে বলতে যাচ্ছি। সেকেন্ড যে হার্ডওয়্যার সুবিধা পেয়েছিল ইন্টেল সেটি হল এর কুলিং সিস্টেমে। এ এম ডির রাইজেন প্রসেসর টেস্ট করা হয় এর সাথে ডিফল্ট রেইথ স্পায়ার কুলার দিয়ে। আমরা দেখেছি এই স্টক কুলার দিয়ে বুস্ট স্পীড বজায় রাখা গেলেও অভারক্লক করা যায় না। অপরদিকে ইন্টেলের প্রসেসরের সাথে যেহেতু স্টক কুলার পাওয়া যায় না সেহেতু কাস্টম কুলার ব্যাবহার করা হয়েছে। তদন্তমতে কুলারটি ছিল Noctua এর NH D15 অথবা D14 প্রিমিয়াম এয়ার কুলার। অর্থাৎ কুলিঙ্গের দিক থেকেও এডভান্টেজ দেওয়া হয়েছে ইন্টেলকে।

প্রসেসর ও মেমোরি ওভারক্লকিং

এবার আসা যাক ওভারক্লকিঙ্গের দিকে। শুরুতেই র‍্যাম ওভারক্লকিং। আমরা জানি, মাদারবোর্ডের বায়োসে Extreme Memory Profile বা XMP নামক একটি অপশন থাকে। এই বক্সে র‍্যাম ওভারক্লক করার জন্য বিভিন্ন স্পীডের বিভিন্ন প্রোফাইল থাকে। জানা গিয়েছে, ইন্টেলের জন্য XMP প্রোফাইল এক্টিভেট করা হলেও এ এম ডির সিস্টেমের জন্য তা এক্টিভেট করা হয় নি। এছাড়া, র‍্যামের মেমোরি টাইমিংও ইন্টেলের জন্য অপ্টিমাইজ করা হয় যা এ এম ডি সিস্টেমের জন্য করা হয় নি।

আর বলা হয়েছে ইন্টেল প্রসেসরের জন্য ব্যাবহার করা হয়েছে কাস্টম এয়ার কুলার। কাস্টম এয়ার কুলার ব্যাবহার করা সুবিধা হচ্ছে অবশ্যই প্রসেসরের হাই ওভারক্লকিং স্পীড। ইন্টেলের I9 9900K কে অভারক্লক করা হলেও স্টক কুলারে বুস্ট স্পীডের উপরে উঠান হয় নি 2700X প্রসেসরকে। যার কারণে, জিপিউকে সম্পূর্ণরুপে ইউটিলাইজ করতে পারেনি এ এম ডির প্রসেসর।

এ এম ডি গেম মোড

এই পয়েন্টটি হচ্ছে একটু ইন্টারেস্টিং পয়েন্ট। এ এম ডির সকল প্রসেসর টেস্ট করার জন্য এক্টিভ রাখা হয় এ এম ডির গেম মোড। নাম শুনে হয়ত আপনার ধারনা হতে গেম মোড জিনিসটা তো ভালই। এতে আবার আলাদা কি অসুবিধা আছে। বলে রাখা ভালো এ এম ডির গেম মোড হচ্ছে শুধুমাত্র হাই এন্ড থ্রেডরিপার প্রসেসরের জন্য।

আপনারা জানেন মডার্ন গেম এখনো ৮ কোরের বেশি প্রসেসরে খারাপ পারফর্মেন্স দেয়। তাই থ্রেডরিপার প্রসেসরের জন্য এ এম ডি রিলিজ করে গেম মোড। এই মোড চালু হলে সিপিউর অর্ধেক কোর ও থ্রেড ডিএক্টিভেট হয়ে যায়। অর্থাৎ ১৬ কোরের প্রসেসর হয়ে যায় ৮ কোরের, ১২ কোরের প্রসেসর হয়ে যায় ৬ কোরের। তাহলে ভেবে দেখুন ৮ কোরের রাইজেন প্রসেসরে এই গেম মোড এক্টিভেট করলে সিপিউটি আসলে কতটি কোর ইউটিলাইজ করতে পারবে। উত্তরঃ মাত্র চারটি কোর। গেম মোড এক্টিভেট করার কারণে ইন্টেলের I9 9900K তার ৮ কোর ১৬ থ্রেড ইউটিলাইজ করতে পারলেও রাইজেন 2700X ব্যাবহার করতে পেরেছে মাত্র চার কোর ও আট থ্রেড। যার কারণে যথাযথ ভাবেই ইন্টেলের প্রসেসরের সাথে এ এম ডির প্রসেসরের বেশ খানিকটা পার্থক্য দেখা গিয়েছে।

সাধারণ ক্রেতার করণীয়

বাংলাদেশে ইন্টেলের ৯ম জেনারেশনের প্রসেসর আসতে আসতে হয়ত নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ লাগতে পারে। আর যেহেতু আমরা বাংলাদেশে আছি, I9 9900K এর কাস্টোমার সংখ্যা কিছুতা হাতে গোণাই হবে। তারপরেও আমরা বলব ইন্টেলের ৯ম জেন প্রসেসর কেনার আগে অবশ্যই রিয়াল টাইম রিভিউয়ারদের রিভিউ দেখে নেবেন। এতে করে প্রসেসর কিনলে কেমন পারফর্মেন্স পাবেন তা সহজেই বুঝে নিতে পারবেন। বাংলাদেশে প্রসেসরের দাম হতে পারে I9 থেকে I5 এ যথাক্রমে ৪৫ হাজার টাকা, ৩৭৫০০ টাকা এবং ২৩৫০০ টাকা। তবে অফিসিয়ালি প্রসেসর আসা মাত্রই আপনাদের জানিয়ে দেয়া হবে।

সময় পেলে পড়ে নিতে পারেন আপনি Core I9 9900K এর প্যাকেজিং ডিটেইলস সম্পর্কে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here