38 C
Dhaka
Tuesday, April 16, 2024

নকল হার্ডডিস্ক হইতে সাবধান!

- Advertisement -

নতুন পিসি বিল্ড কিংবা পুরোনো পিসিকে আপগ্রেড করার ক্ষেত্রে আমরা অন্য সকল অংশে নজর দিলেও সবসময়ই হার্ডডিক্স সেক্টরটিকে তেমন পাত্তা দেই না। গ্রাফিক্স কার্ড এইটা, সিপিইউ সেইটা, র‌্যাম ওইটা ইত্যাদি নিয়ে মাস খানেক মাথা ঘামালেও হার্ডডিক্সের বেলায় ৫০০ জিবি/ ১ টেরাবাইটের ”একটা হইলেই হইছে” টাইপের মনমানসিকতা থাকে আমাদের মাঝে। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন যে, আপনার আর আপনার অফিসের কলিগের পিসির কনফিগারেশন একদম একই । কিন্তু আপনারটার থেকে উনার পিসিকে আপনার কাছে ফাস্ট মনে হয়? কিংবা আপনার কনফিগারেশন এক জেনারেশন এগিয়ে থাকলেও তার এক জেনারেশন পেছনের থেকে ফাস্ট কাজ দিতে পারছে না? তাহলে সম্ভাবনা রয়েছে যে আপনার হার্ডডিক্সটি অতটা আপগ্রেডেড নয়!

কারণ আপনার লাখ টাকার পিসিতেই হোক কিংবা ২০ হাজার টাকার বাজেট পিসিই হোক, সকল পিসির সব মূল প্রোগ্রামগুলো এবং অপারেটিং সিস্টেম কিন্তু এই হার্ডডিক্সেই থেকে থাকে। তাই হার্ডডিক্সের উপরেও আমাদেরকে একটু নজর দেওয়া উচিত। আবার এখন আমরা এই প্রসেসিংকে আরো ফাস্ট করার জন্য SSD ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু আমাদের দেশে এখনো SSD তে সম্পূর্ণরূপে চলে যাওয়ার সময় আসেনি, কারণ SSD এর দাম আর HDD এর দামের মাজে আকাশপাতাল পার্থক্য রয়েছে।

- Advertisement -

আমাদের দেশে মূলত চার ধরণের হার্ডডিক্স পাওয়া যায়:

১) Refurbish
২) Re-certified
৩) Second Hand
৪) Brand New

১) রিফাব্রিশ হার্ডডিক্স: যে হার্ডডিক্স গুলো বাইরের দেশে একবার ব্যবহৃত হয়েছে বা বিভিন্ন টেক রিভিউতে রিভিউ ইউনিট হিসেবে এগুলো একবার/দুইবার ব্যবহার করা হয়েছে কিংবা কাস্টমারের কোনো অভিযোগের ভিক্তিতে যে হার্ডডিক্সগুলোতে সমস্যা থাকে সেগুলো কোম্পানি ফেরত নিয়ে নেয়, তারপর তারা আবারো বিভিন্ন টেস্ট করিয়ে কোনো সমস্যা থাকলে সেটা সেরে নিয়ে তারপর আবারো সেই হার্ডডিক্সকে বিক্রি করে। একে বলা হয় রিফাব্রিশ হার্ডডিক্স। মানে এটাকে আপনি ওয়ারেন্টি যুক্ত সেকেন্ড হ্যান্ড হার্ডডিক্সও বলতে পারেন।

২) রিসার্টিফাইড হার্ডডিক্স: এই হার্ডডিক্সগুলোতে অবশ্যই কোনো সমস্যা ছিলো, তাই একে পুনরায় কোম্পানিরা বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে পুনরায় Certified করে বাজারে আনে। এই জাতীয় হার্ডডিক্স কেনা থেকে বিরত থাকতে চেষ্টা করবেন।

- Advertisement -

৩) সেকেন্ড হ্যান্ড হার্ডডিক্স: এই জাতীয় হার্ডডিক্স নিয়ে তো আর নতুন করে কিছু বলার নেই।

৪) ব্রান্ড নিউ হার্ডডিক্স: নামেই বুঝা যায় এটা একদমই নতুন সরাসরি কোম্পানির ফ্যাক্টরি থেকে চলে এসেছে। এতে কোনো প্রকার পুনরায় সার্টিফাইড বা সমস্যা বা এরকম কোনো কিছুই নেই।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে ব্রান্ড নিউ এবং রিফাব্রিশ ও রি-সার্টিফাইড হার্ডডিক্স চিনবেন? কারণ আমাদের অধিকাংশই যখন পিসি বিল্ড করতে যান তখন দোকানদার রা আপনাকে নতুন হার্ডডিক্স বলে রিফাব্রিশ ঢুকিয়ে দিতে পারে আপনি সেটা ধরতেও পারবেন না। আর সে জন্যই আমার আজকের এই পোষ্ট।

- Advertisement -

রিফাব্রিশ হার্ডডিক্স

রিফাব্রিশ হার্ডডিক্স কেনার সময় ব্রান্ড কোনো ভূমিকা রাখে না। তাই রিফাব্রিশ হার্ডডিক্স কেনার সময় বেশি দাম দিয়ে নামিদামি ব্রান্ড না চয়েজ করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
আর আরেকটা কথা অবশ্যই মাথায় রাখবেন যে বর্তমানে ৫০০ জিবি বা এর নিচের কোনো হার্ডডিক্স আপনি ব্রান্ড নিউ পাবেন না। মানে ১ টেরাবাইটের নিচের সকল হার্ডডিক্স যেগুলো এখন পিসি বিল্ড করতে গিয়ে দোকানে “নতুন” বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে সেগুলো সবই রিফাব্রিশ হার্ডডিক্স। কারণ বর্তমানে কোনো ব্রান্ড ১ টেরাবাইটের নিচে নতুন হার্ডডিক্স উৎপাদন করে না।

রিফাব্রিশ হার্ডডিক্স চেনার একমাত্র উপায় হলো এর প্যাকেজিং। কারণ হার্ডডিক্সের গাঁয়ে বা অন্যকোনো স্থানেই লেখা নেই যে এটা রিফাব্রিশ হার্ডডিক্স। তাই চকচকে ভালো কন্ডিশনের রিফাব্রিশ হার্ডডিক্সকে খুব সহজেই নতুন ব্রান্ড নিউ বলে চালিয়ে দেওয়া যায়। রিফাব্রিশ হার্ডডিক্সের প্যাকেজ থাকবে একটি টান্সপারেন্ট প্যাকেটের ভিতর, মানে বাইরে থেকে ভিতরের হার্ডডিক্সকে দেখা যায় এমন প্যাকেজিংয়ের হার্ডডিক্সকে নতুন বললে আপনি বিশ্বাস না করাটাই বেটার হবে।

আরেকটি উপায় হলো হার্ডডিক্সের গাঁয়ে উৎপাদন ডেট সিল মারা থাকবে, সেটা দেখেও আপনি বুঝতে পারবেন এটা রিফাব্রিশ কিনা। উপরের WD রিফাব্রিশ হার্ডডিক্সে দেখুন ২০১৫ সালের ডেট দেওয়া রয়েছে তাহলে নিশ্চিত হবেন যে বর্তমান তারিখ থেকে ১ বছরের বেশি হলে সেটা রিফাব্রিশ হার্ডডিক্স হওয়ার চান্স ৯০%। কারণ এটা বিশ্বাস করা খুবই কঠিন যে একটি ২০১৫ সালের ব্রান্ড নিউ হার্ডডিক্স ২০১৯ সালে এসেও বিক্রি হয়নি, আপনার জন্যই রেখে দেওয়া হয়েছে! (লোল)

আর দামি ব্রান্ডের রিফাব্রিশ হার্ডডিক্স কিনতে গেলে সেখানে Refurbished নামে আলাদা স্টিকার লাগানো থাকবে।

রিসার্টিফাইড হার্ডডিক্স

আমার মতো কোনো অবস্থাতেই রিসার্টিফাইড হার্ডডিক্স কেনা উচিত হবে না, ব্রান্ড ওয়ারেন্টি থাকলেও। দামি ব্রান্ডগুলো তাদের রিসার্টিফাইড হার্ডডিক্সে স্টিকার এবং পাশ্ববর্তী সাইডে একদম খোদাই করে Recertified কথাটি লেখা থাকবে।

নিতান্তই প্রয়োজন না হলে এই রকম খোদাই করা আর স্টিকার ছাড়া এই জাতীয় হার্ডডিক্স কেনা থেকে বিরত থাকুন।

ব্রান্ড নিউ

এতদিন অনেকেই হয়তো ওইকম পলিকার্বন (রিফাব্রিশ) প্যাকেজিংকে ব্রান্ড নিউ হার্ডডিক্স ভেবেই কিনেছেন। কিন্তু আসলে সেটা না। ব্রান্ড নিউ হার্ডডিক্স চেনার কয়েকটি উপায় রয়েছে। প্রথম হচ্ছে যদি WD এর হার্ডডিক্স নেন তাহলে হার্ডডিক্সের প্যাকেটে স্মার্ট স্টিকার লাগানো থাকবে।

এছাড়াও ছাড়া Seagate এর ব্রান্ড নিউ হার্ডডিক্স কিনবেন তারা অবশ্যই প্যাকেজের গাঁয়ে UCC এর স্টিকার আছে কিনা এটা দেখে নিবেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এইসব অথেনটিক স্টিকার ছাড়া বাকি ব্রান্ড নিউ হার্ডডিক্সগুলো কি ফেইক?

আসলে সেখানে ৯৫%ই হচ্ছে ফেক, আর এই কন্ডিশন শুধুমাত্র বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য কারণ এই হার্ডডিক্সগুলো ব্রান্ড নিউ ভাবে UCC , রায়ানস কম্পিউটার ইত্যাদি বড় শপগুলোই ইম্পোর্ট করে থাকে। তাই পিসি বিল্ড করতে গিয়ে দোকানদারকে বলবেন যে এই রকম অথেনটিক স্টিকারযুক্ত হার্ডডিক্স দিন, তাহলে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারবেন যে আপনাকে ব্রান্ড নিউই দেওয়া হচ্ছে।

পরিশিষ্ট

এখন প্রশ্ন হচ্ছে ভাই আমি কোন ধরণের হার্ডডিক্স নিতে পারি? আর আমার প্রথম চয়েজ হবে বাজেটে থাকলে অবশ্যই ব্রান্ড নিউ নেন আর অবশ্যই ব্রান্ডেড হার্ডডিক্স নিবেন যেটাই নেন না কে। কারণ চায়নিজ হার্ডডিক্স দামে অনেক কম হলেও এর পারফরমেন্সও কয়েকদিন ব্যবহার করার পর আস্তে আস্তে কমে যাবে । আমার পারসোনালি সিগেটের হার্ডডিক্সগুলো বেশি পছন্দ হয়, WD ও নিতে পারেন কোনো সমস্যা নাই কিন্তু WD আর Seagate এর মাঝে দামের পার্থক্য ১৫০ থেকে ২০০ , ৩০০ হয়ে থাকে। আর তোশিবার হার্ডডিক্সও নেওয়ার প্রয়োজন নাই। তোশিবায় আবার এই রিফাব্রিশ, রিসার্টিফাইড এইসব ঝামেলা নাই আর দামে কম হলেও তোশিবার স্পিড আমার কাছে বেশ স্লো মনে হয়েছে।
Second Hand Harddisk: সেকেন্ড হ্যান্ড হার্ডডিক্স যদি আপনার কিনতেই হয় তাহলে অবশ্যই রানিং হার্ডডিক্সগুলোই কিনবেন। ভাই ২/৩ মাস হার্ডডিক্স খুলে রেখে দিসে এই জাতীয় সেকেন্ড হ্যান্ড হার্ডডিক্স কেনার প্রয়োজন নাই। অন্যদিকে সেকেন্ড হ্যান্ড কিনলে বাসা বাড়ীতে ইউজকৃত হার্ডডিক্স কিনবেন, অফিসে ব্যবহৃত বা গেমিং ক্যাফেতে ব্যবহৃত হার্ডডিক্স ভুলেও কিনতে যাবেন না কারণ সেসকল পিসিতে বেশ প্রেসারের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। আর হার্ডডিক্স চলার সময় সেটায় এক ড্রাইভ থেকে অন্য ড্রাইভে ২/৩ জিবির একটা ফাইল কপি পেস্ট করুন। আর পেস্টিং চলার সময় দেখুন কোনো শব্দ আসে কিনা হার্ডডিক্স থেকে। আর ব্যাড সেক্টরও চেক করে নিতে পারেন।

- Advertisement -

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here