32 C
Dhaka
Thursday, April 25, 2024

নিজের এলাকায় কম্পিউটার কম্পোজের দোকান দিবেন ভাবছেন?

- Advertisement -

কেমন আছেন আপনারা? পিসিবিতে অনেক দিন হলো লেখালেখি হয় না, চাকরি বাকরি করে পারসোনাল লাইফ সামলিয়ে আর কোথায় সময় হয় বলুন? তবে আজ শুক্রবার ছুটির দিনে ভাবলাম একটি বিষয় নিয়ে আপনাদের সাথে আমার কিছু এক্সপেরিয়েন্স শেয়ার করি। বিষয়টি হচ্ছে কম্পিউটারের দোকান নিয়ে। কম্পিউটারের দোকান বলতে আমি কম্পোজ দোকানের কথা বলছি, কম্পিউটার বা কম্পিউটার যন্ত্রাংশ কেনাবেচার করার দোকান নিয়ে কথা বলছি না। কারণ ওটা একদম আলাদা বিষয়, ওটা নিয়ে সামনে সময় পেলে আরেকটি পোষ্টে আলাপ করার চেষ্টা করবো।

একটি চাকরির পাশাপাশি নিজের এলাকায় কম্পিউটার কম্পোজের দোকান দিলে খারাপ হয় না। বিশেষ করে যদি আপনি নিজেই দোকানে যদি সময় দিতে পারেন এবং সাথে দু/একজন বিশ্বস্ত লোক রেখে দিতে পারেন তাহলে এটা আপনার জন্য একটা ভালো এক্সট্রা ইনকামের পথ হয়ে উঠতে পারে।

- Advertisement -

বি:দ্র: এই পোষ্টে আমি কোনো ব্যবসায়িক টিপস বা ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় গাইডলাইন দিতে আসেনি, যার যার ব্যবসা করার টিপস তার নিজের কাছে নিজস্ব ব্যাপার, এই পোষ্টে আমি একটি কম্পিউটার দোকান দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় টেক যন্ত্রাদি কিভাবে সিলেক্ট করবেন সেটার উপর নিজের কিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করবো।

কনসেপ্ট

এলাকায় একটা কম্পিউটারের দোকান দেওয়ার আপনাকে প্রথমেই যে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে সেটা হচ্ছে সময়কাল। এটা ২০০৫ বা ২০০৭ সাল নয়, এটা ২০২৩ সাল শেষ হয়ে ২০২৪ সাল শুরু হতে যাচ্ছে দুদিন পরেই।

২০০৫/২০০৭ সালের দিকে দেশের অধিকাংশ লোকেরই নিজস্ব কম্পিউটার ছিলো না বিধায় তখনকার সময়ে একটি কম্পিউটার কম্পোজের দোকান থেকে বলতে গেলে আমরা কম্পিউটারের সকল কাজই করিয়ে নিতাম। এখন যুগ পাল্টিয়েছে। প্রতি প্রায় প্রতিটি ঘরেই কম্পিউটার রয়েছে, আর সেটার পাশাপাশি এখনকার মোবাইল ফোনগুলোও কিন্ত একটি কম্পিউটারের থেকে কম যায় না।

- Advertisement -

এখনকার সময়ে একটি কম্পিউটার কম্পোজ দোকানে যে কারণে আমরা যাই সেটি হচ্ছে ‘প্রিন্ট’ করার জন্য। প্রিন্ট, ফটোকপি এবং গ্রাফিক্সের কাজগুলো করার জন্যই মূলত আমরা কম্পিউটার কম্পোজ দোকানে গিয়ে থাকি। তাই যদি আপনি আপনার বাসার পাশে একটি কম্পিউটার কম্পোজের দোকান দিতে চান তাহলে আপনার মাথায় প্রিন্টার, ফটোকপি মেশিন এবং গ্রাফিক্স এডিট (ফটোশপ) করা যায় এমন কম্পিউটারে সঠিকভাবে ইনভেস্ট করার মানসিকতা থাকতে হবে।

কি কি কিনবেন?

চেয়ার টেবিল বা ডেকোরেশন নিয়ে বা বিজনেস প্লেস নিয়ে কিছু বলবো না আমি সেটা পোষ্টের শুরুতেই বলে দিয়েছি।

প্রিন্ট ফটোকপি করার জন্যই কম্পিউটার কম্পোজ দোকান বেশি চলে তাই আপনাকে ভালো প্রিন্টার মেশিন এবং ফটোকপি মেশিন আনতে হবে।

- Advertisement -

প্রিন্টার: 

আজকাল প্রিন্টার ১০/১২ হাজার টাকাতেই পাওয়া যায়। তবে আমি এসকল এন্ট্রি লেভেল প্রিন্টার না কেনারই সাজেস্ট করবো। এখানে একটি কথা রয়েছে, যদি আপনি ফটোকপি মেশিন কিনেন তাহলে প্রিন্টারে বেশি ইনভেস্ট করা ঠিক হবে না। কারণটা পরে বলছি।

যদি দোকানে ফটোকপি মেশিন না আনেন তাহলে প্রিন্টারের ক্ষেত্রে আপনাকে ৩০/৪০ হাজার খরচ করতে হতে পারে। Both Side Duplex Print ফিচারসহ প্রিন্টার কেনার সাজেস্ট করবো আমি। মানে যে প্রিন্টারে কাগজের এপিঠ ওপিঠ একসাথে প্রিন্ট হয় সেটা কিনবেন।

প্রিন্টার কেনার সময় আমরা যে বিষয়টি নজরে দেই না সেটা হচ্ছে প্রিন্টার টোনার। ভালো প্রিন্টার কেনার পরে সস্তা চাইনিজ টোনার ব্যবহার করার কারণে আমাদের প্রিন্টারগুলো Long Life সার্ভিসটি আমরা কমিয়ে দিচ্ছি। টোনার নিয়ে আমার পরামর্শ হলো আপনি ভালো মানের টোনার ব্যবহার করুন, প্রিন্টার থেকে তাহলে আপনি বেশ অনেকদিনই ভালো সার্ভিস পাবেন। এখন বাজেটে চিপওয়ালা টোনার পাওয়া বেশ মুসকিল, তাই আপনি আশেপাশে খোঁজ রাখুন কোথায় সেকেন্ড হ্যান্ডে ভালো মানের পুরান মডেলের প্রিন্টার সেল হয় কিনা (বিশেষ করে HP 402 মডেলটা) ।

এবং আপনি যদি দোকানে ফটোকপি মেশিন নিতে চান তাহলে আমি বলবো আপনি প্রিন্টারে আলাদা করে খরচ না করে শুধু কালার প্রিন্টার কিনে ফেলুন। কারণ আপনি পিসির সাথে প্রাইমারি ভাবে ফটোকপি মেশিনকে প্রিন্টার হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন, মনে রাখবেন প্রিন্টারের থেকে কম্পিউটারের সাথে ফটোকপি মেশিনকে প্রিন্টার হিসেবে ব্যবহার করলে আপনার অনেক পরিমাণে কালি বেঁচে যাবে।

ফটোকপি:

দোকানে ফটোকপি মেশিন রাখতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে ভালো মানের ফটোকপি মেশিন এবং অবশ্যই অবশ্যই অরিজিনাল কালির টোনার ব্যবহার করতে হবে। ভালো ফটোকপি সার্ভিস দিতে পারলে ওই কাস্টমার ফটোকপির জন্য বারবার আপনার দোকানেই আসবে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ফটোকপি মেশিন কিনতে হলে আপনাকে লাখ খানেক টাকা খরচ করতে হবে। আর ব্রান্ড হিসেবে আফটার সেলস সার্ভিস হিসেবে এবং পার্টসপাটির কথা বিবেচনা করলে দেশে TOSHIBA ব্রান্ডই অনেক জনপ্রিয় বলা যায়। আপনি Toshiba ব্রান্ডের ফটোকপি মেশিন কিনলে অবশ্যই চেষ্টা করবেন সরাসরি অথোরাইজ মেইন ডিলারদের থেকে কিনতে। মনে রাখবেন একটি বড় কম্পিউটার শপে ফটোকপি মেশিন সেল হলেও আপনার উচিত অথোরাইজ মেইন ডিলারদের থেকে ফটোকপি মেশিন ক্রয় করা, তোশিবার মেইল ডিলার আপনি মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায় একটু খোঁজ নিলেই পেয়ে যাবেন।

ফটোকপি মেশিন কেনার সময় মেশিনের সাথে একটি ডেমো টোনার দেওয়া হয়ে থাকে, সেটা দিয়ে আপনি ১০ হাজার কপি ফটোকপি করতে পারবেন, তারপরেই আপনাকে নিজ থেকে মেশিনের জন্য কালি টোনার কিনতে হবে। আর অবশ্যই মেশিনে চাইনিজ মাস্টার কপি টোনার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবেন। দাম একটু বেশি হলেও সবসময় মেশিনে অরিজিনাল টোনার ব্যবহার করবেন। এটা আমি আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে শেয়ার করছি।  যেমন চাইনিজ মাস্টার কপি টোনার ৭৫০০ টাকা, এটায় প্রিন্ট হবে ২২ থেকে ২৩ হাজার। আর অন্যদিকে অরিজিনাল তোশিবা টোনারের দাম ৯০০০ টাকা, এটায় প্রিন্ট হবে ৩৮ থেকে ৪০ হাজার কপি। মাত্র ১৫০০ টাকার জন্য আপনি কেন অর্ধেক কোয়ানটিটির চায়নিজ টোনার কিনতে যাবেন? ফটোকপি টোনার চায়নিজ এবং অরিজিনালের মধ্যে সবথেকে সহজ উপায়ে পার্থক্য চেনার নিয়ম হচ্ছে টোনারের Chipটি খুলে চেক করা। এ সকল বিষয় মেশিন কেনার সময় ডিলারদের থেকে আপনি A to Z বুঝে নিবেন।

কম্পিউটার:

দোকানে কয়টি কম্পিউটার রাখবেন সেটা নির্ভর করবে আপনার উপর। তবে গ্রাফিক্সের কাজ করার জন্য আপনাকে ৮ জিবি র‌্যামের পিসি কিনতে হবে। প্রসেসর যেকোনোটা নেন সমস্যা নেই তবে ৮ম জেনারেশনের নিচে যাওয়া চলবে না। বাজেট থাকলে আপনি ৪০ হাজারেই 13th Gen এর ৮ জিবি র‌্যাম ওয়ালা পিসি পেয়ে যাবেন সেটা Long Run এ আপনাকে অনেক সার্পোট দিবে।

একটি কম্পিউটার কম্পোজের দোকানে গ্রাফিক্স কার্ড দিয়ে কোন কাজই করা হয় না, তাই কম্পিউটারে অহেতুক গ্রাফিক্স কার্ড লাগিয়ে পুঁজি শেষ করতে যাবেন না যেন।

মনিটরের ব্যাপারে বলতে গেলে আমি বলতে পারি এটা যার যার পছন্দের উপরে নির্ভর করে। আপনি চাইলে ১৮ ইঞ্চির মনিটরও ব্যবহার করতে পারেন আবার ২৮ ইঞ্চির মনিটর ব্যবহার করতে পারেন। তবে আমি সাজেস্ট করবো মনিটর চাইনিজ ব্রান্ডের যেন না হয়, দাম কমের জন্য এসকল মনিটর Long Use এ আপনার চোখের ক্ষতি করবে। তাই চেষ্টা করবেন ব্রান্ড মনিটর নেওয়ার জন্য। বর্তমানে ১১/১২ হাজার টাকায় শাওমির ২৩.৮ ইঞ্চির বেশ সুন্দর মনিটর পাওয়া যায়, যদি বড় সাইজের মনিটরে ঝোঁক থাকে তাহলে এগুলো দেখতে পারেন।

কাগজ

একটি কম্পিউটার কম্পোজের দোকানে পিসি, প্রিন্টার, ফটোকপি মেশিনের পর সে জিনিসটি সবথেকে বেশি প্রয়োজন হয় সেটি হচ্ছে কাগজ।

কাগজ কেনার ক্ষেত্রে আপনি আপনার এলাকায় পাইকারি কাগজের দোকান খুঁজে বের করুন তাহলে কম দামে বেশি কাগজ ক্রয় করতে পারবেন।

কাগজ কেনার ক্ষেত্রে দুই কোয়ালিটির কাজ কিনবেন। জ্বী কাগজেও কোয়ালিটি রয়েছে। কাগজ কেনার সময় GSM মান দেখে কেনার চেষ্টা করবেন। কাগজের Standard হচ্ছে হচ্ছে 70 GSM, ভালো কাগজের মান 80 GSM এবং একদম ভালো কোয়ালিটির কাগজের মান 90 GSM এবং এর উপরের গুলো।

GSM মানের উপর কাগজের দাম নির্ভর করবে। যেমন একটি A4 70GSM কাগজের রীমের দাম ২৫০ টাকা, আবার এক রীম A4 80GSM কাগজের দাম ৩৭০ থেকে ৩৯০ টাকা।

দুই কোয়ালিটির কাগজ কেনার পর আপনি ফটোকপিতে 70 GSM কাগজ সবসময় ব্যবহার করবেন এবং গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট প্রিন্ট করার সময় প্রিন্টারে 80GSM কাগজ ব্যবহার করবেন। GSM যত বেশি হবে কাগজের মান এবং ওজন তত বেশি হবে।

রক্ষণাবেক্ষণ

কম্পিউটার: কম্পিউটার রক্ষণাবেক্ষণ আপনার নিজের ব্যবহারের উপর নির্ভর করবেন। পিসির সাথে অবশ্যই একটি ভালোর মানের UPS ব্যবহার করবেন। ভালো মানের পাওয়ার ক্যাবল, মাল্টি প্লাগ এগুলোও ব্যবহার করা জরুরী। আমরা ১০০/২০০ টাকার বাঁচানোর জন্য এই ছোটখাট জিনিসগুলোতে নজর দেই না। কিন্তু এগুলোও আমাদের পিসির হেলথের জন্য পরোক্ষভাবে অনেক সাপোর্ট দিয়ে যায় যেটা আমরা টের পাই না। কম্পিউটার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আমাকে আলাদাভাবে নতুন করে কিছু বলার নেই কারণ এই টপিকে ইউটিউবে গুগলে সার্চ দিলে আপনারা অনেক অনেক ভিডিও এবং আর্টিকেল পেয়ে যাবেন।

প্রিন্টার: প্রিন্টার থেকে ভালো সার্ভিস পাওয়ার প্রথম শর্ত হচ্ছে ভালো মানের টোনার ব্যবহার করা। প্রিন্টার দিয়ে ফটোকপির কাজ না করানো (যেমন প্রিন্টারে ৭০/১০০ পেজ এক সাথে প্রিন্ট না দেওয়া)। প্রিন্টারে কাগজ লোড করার সময় Gentle থাকা। কালার প্রিন্টারে সঠিক মানের কালির কম্বিনেশনযুক্ত বোতল ব্যবহার করা ইত্যাদি।

ফটোকপি: ফটোকপি মেশিনের বেলাও আমি বলবো যে প্রথম ধাপ হচ্ছে অরিজিনাল টোনার ব্যবহার করা। ফটোকপি মেশিনের ভেতরে কিছু কিছু যন্ত্রাংশ রয়েছে যেগুলো একটি নিদির্ষ্ট সময় পর পর চেঞ্জ করতে হয়, যেমন ডেভেলপার গুড়া আপনাকে দেড় লক্ষ থেকে দুই লক্ষ প্রিন্ট হবার পর পরিবর্তন করতে হবে। এগুলো সময় মত ভালো টেকনিশিয়ানকে দিয়ে চেঞ্জ করালে আর বছরে দুই বার ফটোকপি মেশিন সার্ভিসিং করালে মেশিন দিয়ে আপনি অনায়াসে ৪/৫ বছর ভালো সার্ভিস পেতে পারবেন।

পরিশেষ

আজকের পোষ্টটি সম্পূর্ণ আমার নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে লেখা হয়েছে। কোনো ভুলক্রটি থাকলে সেটা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য আহ্বান করছি। কম্পিউটার কম্পোজ দোকান দিতে চাইলে উপরের বিষয়গুলোর প্রতি নজর দিয়ে তারপরেই সামনে আগানো উচিত। কম্পিউটার বলেন, প্রিন্টার বলেন আর ফটোকপি মেশিনই বলেন; যত্ন নিতে পারলে সবকিছুই আপনাকে অনেক দিন ভালো সার্ভিস দিয়ে যাবে। ফটোকপি মেশিনটি দোকানে এমন স্থানে সেট করবেন যেখানে পর্যাপ্ত পরিমানে বাতাস আপডাউন করতে পারে, যাতে অনেকগুলো ফটোকপির সময় মেশিনটি অতিরিক্ত গরম না হয়ে যায়।

- Advertisement -

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here