৪০ হাজার টাকা ইন্টেল গেমিং পিসি বায়িং গাইড!

৪০ হাজার টাকার গেমিং পিসি!

আমাদের কাছে প্রায় সব সময় রিকুয়েস্ট আসে ৪০ হাজার টাকার মধ্যে গেমিং পিসির কনফিগারেশন করে দেয়ার জন্য। কিন্তু বর্তমান বাজার দর আন্সটেবল থাকার কারণে আমাদের এই বায়িং গাইড দেয়া সম্ভব হয়ে উঠে নি। অতঃপর অনেক ঝাক্কি ঝামেলা পার করে আপনাদের জন্য আজকে নিয়ে এলাম মোস্ট রিকুয়েস্টেড ৪০ হাজার টাকার গেমিং পিসি বায়িং গাইড। এই বায়িং গাইডে আমরা চেস্টা করেছি ৪০ হাজার টাকার মধ্যেই সব ল্যাটেস্ট জেনারেশনের কম্পোনেন্ট ঢুকানোর জন্য।

বি:দ্র: আমাদের রেকমেন্ড করা ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট কিনলে মোট দাম হয়ত ৪০ হাজার টাকার কাছাকাছি থাকবে কিন্তু ব্র্যান্ড ভেদে একই ধরণের কম্পোনেন্ট এ দাম কমতেও পারে আবার বেড়ে যেতে পারে। সব কিছু নির্ভর করছে আপনি কোন ব্র্যান্ডের জিনিস কিনছেন। অবশ্য নতুন এম আর পি সিস্টেমের কারণে দোকান ভেদে দাম চেঞ্জ হবে না।

Main Components

যে কোন কম্পিউটারের মেইন কম্পোনেন্ট হয়ে থাকে ৭ টি। সেগুলো হচ্ছে প্রসেসর, মাদারবোর্ড, র‍্যাম, হার্ডডিস্ক, পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট, গ্রাফিক্স কার্ড এবং চ্যাসিস। তবে গ্রাফিক্স কার্ড ছাড়া মেইন কম্পোনেন্ট সংখ্যা ৬ টিও ধরা যায়। উল্লেখিত প্রোডাক্ট কোথায় পাওয়া যাবে তা জানতে প্রোডাক্টের নামের বাটনে ক্লিক করুন।

Processor

Intel 8th Gen I3 8100

দাম: ১১,৩০০ টাকা

এই বাজেটে চোখ বন্ধ করে যে প্রসেসরটি সিলেক্ট করা যায় তা হচ্ছে ইন্টেলের ল্যাটেস্ট ৮ম জেনারেশনের কফিলেকের Core I3 8100 সিপিউটি। এই প্রসেসরে আপনারা পাবেন ৪ টি কোর ও ৪ টি থ্রেড। অর্থাৎ এই প্রসেসর আপনাকে ইন্টেলের আগের জেনারেশনের Core I5 প্রসেসরের সমান পারফর্মেন্স দেবে। পার্থক্য শুধু একটাই এই প্রসেসরে আপনি কোন আলাদা বুস্ট স্পীড পাচ্ছেন না। এর বেইজ স্পীড হচ্ছে 3.6 GHz এবং ক্যাস মেমোরি পাবেন ৬ মেগাবাইট।

এই প্রসেসরে আপনি বর্তমান জেনারেশনের GTX 1070 পর্যন্ত ভাল কম্প্যাটিবিলিটি পাবেন এবং আগামি জেনারেশনের GTX 1160 বা এ এম ডির RX 670/680 জিপিউ ব্যাবহার করতে পারবেন। এই প্রসেসর সিলেক্ট করা হয়েছে আপগ্রেডিবিলিটির কথা চিন্তা করেই।

Alternative Option

Intel Pentium G5400 Gold

দাম: ৭৫০০ টাকা

এই প্রসেসরটি হচ্ছে শুধুমাত্র তাদের জন্য যারা খরচ ৩৫ হাজারের আশেপাশে রাখতে চান। এই প্রসেসরটি হচ্ছে একটি ডুয়াল কোর প্রসেসর। I3 এর প্রায় ৬০% পারফর্মেন্স এতে পাবেন। তবে এই প্রসেসর সিলেক্ট করলে আপনাদের আপগ্রেডিবিলিটির অপশন অনেকাংশেই কমে আসবে।

Motherboard

MSI H310 Pro-VH

দাম: ৬৫০০ টাকা

মাদারবোর্ডের জন্য বেসিক্যালি আমরা মার্কেটে যেটা সবচেয়ে কম দামের মধ্যে ছিল সেটিই সিলেক্ট করেছি। আর আমাদের সিলেক্ট করা মাদারবোর্ড হচ্ছে MSI H310 Pro-VH মাদারবোর্ডটি। এটির মধ্যে আপনারা পাবেন H310 চিপসেট যা হচ্ছে খুবই সাধারণ মানের এন্ট্রি লেভেলের চিপসেট। ৬৫০০ টাকার মাদারবোর্ডে যা পাওয়া দরকার তাই পাবেন। যদি বেশি ফিচার পেতে চান তাহলে আমাদের ভিডিওতে দেখানো MSI B360M Gaming Plus মাদারবোর্ড ব্যাবহার করতে পারেন।

Memory

Geil Evo Spear 8 GB DDR4 2400 MHz

দাম: ৬৭০০ টাকা

 

বর্তমান যুগে ৮ জিবি র‍্যাম ছাড়া গেমিং পিসি চিন্তা করা সম্ভব নয়। যে কোন গেমই এখন ৩/৪ জিবি মেমোরি খেয়ে ফেলে ফুল টাইম রানিঙ্গের সময়। আর সিস্টেমের জন্য আলাদা এক দেড় জিবি মেমোরি এলোকেশন তো রয়েছেই। সুতরাং সাধারণ গেমিঙ্গেই এখন আপনার ৮ জিবি র‍্যাম কমপক্ষে প্রয়োজন। এমনকি এখন গেমিং দুনিয়া এমন হয়ে গিয়েছে সকল আপকামিং পিসি গেমের মিনিমাম রিকুয়ারমেন্ট এখন ৮ জিবি র‍্যাম।

যদিও ভিডিওতে দুটি ৪ জিবি র‍্যাম ব্যাবহার করা হয়েছে, আপনাদের সব সময় রেকমেন্ড করব একটি সিঙ্গেল ৮ জিবি মেমোরি কিট নেবার। আর এখানে আমাদের পছন্দ হচ্ছে Geil Evo Spear 8 GB 2400 MHz DDR4 মেমোরি। বেসিক্যালি হিটসিঙ্ক আছে এমন র‍্যাম যত কম দামের মধ্যে সম্ভব খুজে কিনে নিতে পারেন।

Storage

Seagate Baraccuda 1TB HDD

দাম: ৩৭৫০ টাকা

আরো একটি কম্পোনেন্ট যেটা চোখ বন্ধ করে নেয়া যায় সেটি হচ্ছে হার্ডডিস্ক। এক্ষেত্রে ডিফল্ট যে স্টোরেজ চলে আসে তা হচ্ছে Seagate Baraccuda 1TB হার্ডডিস্ক। ৪০ হাজার নয়, ৭০ হাজার টাকার বিল্ড পর্যন্তও ১ টেরাবাইট স্টোরেজ ইনাফ। আর আপনারা খুব ভাল করেই জানেন, এখন ল্যাটেস্ট রিলিজগুলো কেমন জায়গা খায়। ৪ টি গেম ইন্সটল করলেই দেখা যায় ২৫০ জিবি স্টোরেজ গায়েব হয়ে যায়। তাই গেমিং পিসি হিসেব করলে মিনিমাম এক টেরাবাইট স্টোরেজ রাখা মাস্ট। তবে পরবর্তীতে একটি এস এস ডি বা এডিশনাল হার্ডডিস্ক যোগ করে নিতে পারেন।

Graphics Card

Nvidia GT 1030 2 GB GDDR5 

দাম: ৯২০০ টাকা

৪০ হাজার টাকার বাজেটের ক্ষেত্রে আমরা চেস্টা করেছি বাজেট রেঞ্জের মধ্যে সবচেয়ে ভাল জিপিউটি দেবার। আর এক্ষেত্রে আমাদের রেকমেন্ডেশন হচ্ছে Nvidia GT 1030 2 GB GDDR5। এই গ্রাফিক্স কার্ডের ক্ষেত্রে আপনাদের পছন্দমত যে কোন ব্র্যান্ডের নিতে পারেন। পারফর্মেন্স মোর অর লেস সেইম পাবেন।

এক্ষেত্রে আমাদের সেকেন্ডারি অপশন ছিল এ এম ডির RX 550 জিপিউটি কিন্তু পারফর্মেন্স ডিফ্রেন্স আমাদের GT 1030 ই সিলেক্ট করতে বাধ্য করেছে। তবে খেয়ালে রাখবেন আপনার কেনা ভার্শনতি যেন GDDR5 মেমোরি ভার্শনের হয়। কারণ ইন্টেল চুপিসারে GT 1030 এর DDR4 ভার্শন বের করেছে যা GDDR5 ভার্শন থেকে অনেকাংশেই খারাপ।

Power Supply Unit (PSU)

Thermaltake Litepower 350 Watt

দাম: ২৫০০ টাকা

এই বিল্ডে সাধারণ স্টক পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট ব্যাবহার করলেই ইনাফ, কিন্তু সেগুলোর কোন গ্যারান্টি বা ওয়ারেন্টি নেই। তাই মিনিমাম কয়েক বছর যাতে কোন সমস্যা না হয় সেই চিন্তা করেই বাজারের সবচেয়ে কম দামের পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট কে আমরা সিলেক্ট করেছি। আর এটি হচ্ছে Thermaltake Litepower 350 Watt পিএসইউ। এটি দিয়ে আপনি GTX 1050 ti পর্যন্ত গ্রাফিক্স কার্ড চালাতে পারবেন। GT 1030 তো কোন ব্যাপারই না। তার উপর আপনি পাচ্ছেন ২ বছরের ওয়ারেন্টি। অর্থাৎ পিএসইউ এর উপর দুই বছর ধরে যতই লোড দেন না কেন, আপনাকে আলাদা করে কোন চিন্তা করতে হবে না।

চ্যাসিস/কেসিং

Thermaltake Versa H24

দাম: ৩৫০০ টাকা

সিনিয়র মানুষদের কাছে কম্পিউটার চ্যাসিস একটি সাধারণ টিনের বাক্স ছাড়া আর কিছুই নয়। কিন্তু যারা একচুয়ালি কম্পিউটার কেনেন তারা খুব ভাল করেই জানেন, কম্পিউটারের চ্যাসিস বিউটি এবং প্রোটেকশনের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তাই এয়ার ফ্লো, লুক ও ফিচারের কথা চিন্তা করে আপনাদের জন্য আমাদের রেকমেন্ডেশন থার্মালটেকের Versa H24 কেসিংটি। ডুয়াল ডিভিডি ড্রাইভ লাগানোর জায়গা, এক্সট্রা ফ্যান লাগানোর সুবিধা আর বেশ ভাল মানের এবং লম্বা গ্রাফিক্স কার্ড লাগানোর সুযোগ তো থাকছেই। সিস্টেম আপগ্রেড করলেও খুব ভাল মানের প্রিমিয়াম জিনিস না নিলে আপনাকে আর চ্যাসিস আপগ্রেড করতে হবে না।

Total Cost

এই বিল্ডের জন্য অনলাইন প্রাইসে মোট খরচ এসেছে বরাবর ৪১ হাজার ২৫০ টাকা। তবে ফুল পিসি কিনতে গেলে দাম ১ থেকে দেড় হাজার টাকা কমতে পারে। কিন্তু আপনি যদি সস্তা পিএসইউ, কেসিং আর সিপিউ ডাউনগ্রেড করেন খরচ ৩৫/৩৬ হাজার টাকার কাছাকাছি চলে আসবে। তবে আমার মতে এই ডাউনগ্রেড আপনার ফিউচারের জন্য অনেকটা খারাপই হবে।

Upgradability

এই সিস্টেমে আপনি আপগ্রেড করতে পারবেন মাদারবোর্ড আর চ্যাসিস ছাড়া প্রায় সব কিছুই। ইন্টেলের ৯ম জেনারেশনের প্রসেসর সাপোর্ট করানো যাবে কেবল সামান্য বায়োস আপগ্রেডের মাধ্যমে। এছাড়া খুব সহজেই ভাল মানের পিএসইউ ইউনিট, স্টোরেজ ও র‍্যাম আপগ্রেডের সুযোগ তো থাকছেই। সবশেষে নেক্সট জেনারেশনের ভাল মানের জিপিউ দিয়ে পুরাতন জিপিউ রিপ্লেস করার অপশন তো থাকছেই।

Conclusion

আশা করি বিল্ডের রেকমেন্ডেশন আপনাদের কাছে ভাল লেগেছে। আর ৪০ হাজার টাকার বিল্ড নিয়ে কনফিউশন কিছুটা হলেও দূর হয়েছে। আর যদি আপনাদের বাজেট হয় ৫০ হাজার টাকার উপরে কিন্তু ৬০ হাজার টাকার নীচে তাহলে দেখে আসতে পারেন ৫৫ হাজার টাকা গেমিং পিসি বায়িং গাইড!

আপনারা সবাই ভাল থাকুন আর সঙ্গে থাকুন পিসিবি বিডির সাথেই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here