30 C
Dhaka
Thursday, April 25, 2024

আপনার স্মার্টফোন থেকে করোনা ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা আছে কি???

- Advertisement -

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে আমাদের সচেতনতাই আমাদেরকে রক্ষা করতে পারে। আর তাই আমরা অন্য সবকিছুর চাইতে নিজের সচেতনাকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে আমাদেরকে বলা হচ্ছে বেশি বেশি করে হাত সাবান দিয়ে কমপক্ষে ১ মিনিট ধরে ধুঁতে। কারণ করোনা ভাইরাস আমাদের শরীলে প্রবেশের অন্যতম মূল পথ হচ্ছে আমাদের হাত। কিন্তু আমাদের বর্তমান ডিজিটাল যুগের সবথেকে বহুল ব্যবহৃত এবং আমাদের সবথেকে বেশি ধরাছোঁয়ার বস্তুটি হচ্ছে আমাদের স্মার্টফোন। আর আপনি জানেন কি আপনি যতই পরিস্কার পরিচ্ছন্ন আর হাত ধুঁয়ে থাকেন না কেন আপনার সেই প্রিয় স্মার্টফোনটির জন্যই আপনি করোনা ঝুঁকি তে রয়েছেন! কিভাবে? আসুন জেনে নেই।

আমি আজ ইন্টারনেটে এই বিষয় নিয়ে বেশ কিছু স্টাডি ঘেঁটে দেখলাম, সেখানে এই বিষয়টির উপর মাইক্রোস্কোপিক গবেষণার পর এটা পাওয়া গিয়েছে যে, আমরা দৈন্যন্দিন জীবনে যেসকল ডিজিটাল গেজেট ব্যবহার করে থাকি (যেমন স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, ল্যাপটপ, ডেক্সটপ – কীবোর্ড, মাউস, স্মার্টওয়াচ, গাড়ীর চাবি, ওয়ালেট ইত্যাদি) সেগুলো আমাদের বাথরুমের কমোডের চাইতেও ২০ থেকে ১০০ গুণ বেশি ময়লা এবং জীবানুযুক্ত থাকে!
এই কথাটি শুনে আপনার মতোই আমারো বেশ শক লেগেছিলো! আপনি আমার মতোই এখন ভাবছেন যে কিভাবে এটা সম্ভব! আপনার বাসার টয়লেট আপনি প্রতিনিয়তই মাসে দুই, তিনবার করে পরিস্কার করে থাকেন। আর পরিস্কার করার জন্য যে কেমিক্যাল ব্যবহার করে সেটার জন্য আপনার টয়লেটের অধিকাংশ জীবানু মরে যায়। কিন্তু এদিকে আপনার দৈনন্দিন গেজেটগুলো যেমন আপনার স্মার্টফোনটি কি এভাবে পরিস্কার করা হয়েছে কখনো??? আপনি শেষ কবে আপনার স্মার্টফোনটি পরিস্কার করেছিলেন???

- Advertisement -

এই প্রশ্নের উত্তরে আপনাদের থেকে ৯৯.৯% ই বলবেন যে, স্মার্টফোনটি কেনার পর থেকে এখন পর্যন্ত একদিনও একে পরিস্কার করা হয়নি। ওই যে নতুন স্মার্টফোনের বক্স থেকে যে ব্যবহার করা শুরু করেছেন……তো করেছেনই! এখন গবেষণা বলছে যে কমোডের চাইতেও ২০ থেকে ১০০ গুণ বেশি জীবানু এই স্মার্টফোনে থাকে। কিন্তু কিভাবে?

আমরা ফোনে কথা বলার সময় আমাদের কান এবং মুখের সবথেকে কাছে থাকে এই স্মার্টফোন। আর ধরুণ আপনার কোনো ভাইরাল ছোঁয়াচে ইনফেকশন রয়েছে আর আপনি স্মার্টফোনে কথা বলছেন, তখন আপনার মুখের মাধ্যমে আপনার ইনফেকশনটি আপনার স্মার্টফোনে অটোমেটিক্যালি ট্রান্সফার হয়ে যায়। কারণ কথা বলার সময় স্মার্টফোন আমাদের মুখের ১ থেকে ২ সেন্টিমিটার কাছে থাকে।
আর সেই ইনফেক্টেট স্মার্টফোনটি আপনার হাত থেকে আপনার অফিসের ডেস্কে, চায়ের দোকানের বেঞ্চে, আপনার বন্ধুর বাসার বিছানার উপর যদি আপনি ডিভাইসটি রাখেন তাহলে সে সকল স্থানগুলোতে ডিভাইসটির মাধ্যমে ওই ইনফেকশনটি ছড়িয়ে যায়। আর তারপরই যদি সেই স্থানে অন্য কোনো ব্যক্তি তার স্মার্টফোনটি রাখেন তাহলে তার স্মার্টফোনেও ওই ইনফেকশনটি চলে আসে আর তিনিও তার স্মার্টফোন ব্যবহারের মাধ্যমে ওই ভাইরাস ছোঁয়াচে ইনফেকশনে ধাবিত হয়ে পড়েন। এছাড়াও ইনফেকটেক ব্যক্তির ফোন ধরলে, কিংবা আপনার ফোনটি কোনো ইনফেক্টেড ব্যক্তির কাছে দিলেও এভাবে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে।

আর আমাদের স্মার্টফোন ক্লিন করার সবথেকে কার্যকরি মাধ্যম হচ্ছে UV Light । স্মার্টফোনটি UV লাইটের মাধ্যমে সেনিটাইজ করলে ফোনে ৯৯.৯% জীবানুমুক্ত হয়ে পড়ে। এখন সমস্যা হচ্ছে UV Light সেনিটাইজার গুলো দাম তুলনামুলক অনেক বেশি (২৫ মার্কিন ডলার থেকে শুরু) আর আমাদের অধিকাংশই ফোন ক্লিন করার জন্য এই UV Light সেনিটাইজ পদ্ধতি প্রেফার করি না।

- Advertisement -

আমাদের সাধারণ ইউজারদের জন্য এই অপেক্ষাকৃত দামী UV Light ক্লিনার কেনা কস্টকর হলেও আমরা বিকল্প পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করে UV Light এর মতো অতটা ক্লিন না হলেও স্মার্টফোনকে অনেকটাই ক্লিন রাখতে পারবো। ক্লিনিং প্রসেসের সবকিছুই আপনি আপনার নিকটস্থ ফার্মেসি বা মেডিক্যাল সেন্টার থেকে সহজেই সংগ্রহ করতে পারবেন।

1) Cleaning Wipe

স্মার্টফোন পরিস্কার করার জন্য আপনি যেকোনো ভালোমানের Cleaning Wipe ব্যবহার করতে পারেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে যে এটায় যাতে নুন্যতম 70% Isopropyl Alcohol (IPA) উপদান বিদ্যমান থাকে। এই কেমিক্যাল উপদানই Wipe কে আপনার স্মার্টফোনের অধিকাংশ যার্মকে পরিস্কার করে ফেলতে পারবে।

- Advertisement -

2) Hand Sanitizer

আপনার কাছে যদি IPA যুক্ত কোনো Cleaning Wipe না থাকে তাহলে আপনি যে কোনো হ্যান্ড স্যানিটাইজার (IPA যুক্ত) ব্যবহার করতে পারেন। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে যে হ্যান্ড স্যানিটাইজারটি যাতে আসল ব্রান্ডের অরিজিনাল হয়, ফেইক ব্যবহার করলে চলবে না।

3) Disinfectant Liquid

আর উপরের কোনটিই যদি আপনি এরেঞ্জ করতে না পারেন তাহলে বাসায় থাকা যেকোনো ধরণের Disinfectant লিকুইড যেমন ডেটল দিয়েও আপনি স্মার্টফোন ক্লিনিংয়ের কাজটি সেরে নিতে পারেন।

কিভাবে স্মার্টফোন ক্লিন করবেন?

স্মার্টফোন ক্লিন করার সকল উপদান আপনার কাছে থাকলেও কিভাবে স্মার্টফোনটিকে “সঠিকভাবে” ক্লিন করবেন সেটাও আপনার জানা থাকা দরকার। কারণ আমাদের স্মার্টফোনের স্ক্রিণটি বেশ সেন্সিটিভ হয়ে থাকে, গ্লাসের হয়ে থাকে আর তাই যেকোনো সময় সাধারণ ঘঁষা থেকেও স্ক্রিণে দাগ বা স্ক্র্যাচ লেগে যেতে পারে। আর স্যানিটাইজার, ডেটল বা যে ধরণেরই লিকুইড ক্লিনিং ব্যবহার করেন না কেন যেগুলোতে মাইক্রোস্কোপিক Particles থাকে যা আমাদের চোখে দেখা যায় না, কিন্তু আপনি যদি এগুলোকে সরাসরি স্মার্টফোনের উপর প্রয়োগ করেন তাহলে স্মার্টফোনের ডেমেজ হবার চান্স কিন্তু থেকে যাবে।

প্রতীকী ছবি

Cleaning Wipe টি নিন, কয়েকটি ভাঁজ করুন। তারপর মোবাইলের স্ক্রিণে আলতো করে ঘঁষতে থাকুন। স্ক্রিণ এবং ব্যাক পার্টে একই ভাবে ঘঁষে নিন। তবে ব্যাকের থেকে স্ক্রিণে খুবই আলতো করে ঘঁষতে হবে। আর কমপক্ষে ১ মিনিট ধরে ঘঁষতে হবে।

Cleaning Wipe না থাকলে:

যদি কোনো কারণে Cleaning Wipe না যোগাড় করতে পারেন তাহলে আপনাকে মাইক্রোফাইবার কাপড় দিয়ে ক্লিন করতে হবে। Microfiber Cloth যেমন আমাদের চশমা মোছার জন্য চশমার সাথে যে ছোট কাপটি দেওয়া থাকে সে ধরণের কাপড় হতে হবে। ভুলেও কখনো সুঁতি কাপড় দিয়ে মুছতে যাবেন না যেন।

একটি পাত্রে পানি নিন। এবার ডেটল বা যেকোনো Disinfectant লিকুইড নিন এবং অল্প করে পানির সাথে মিক্স করুন। এবার মাইক্রোফাইবার কাপড়টি এই পানিতে চুবিয়ে নিন, তারপর কাপড়টি উঠিয়ে নিয়ে পানি নিগড়ে নিন। লক্ষ্য রাখবেন যে কাপড়টিতে অতিরিক্ত পানি না থাকে। তারপর কাপড়টি দিয়ে আলতো করে ১ মিনিট ধরে স্মার্টফোনের স্ক্রিণ এবং ব্যাকপার্ট ঘঁষে নিয়ে ক্লিন করে নিন। উল্লেখ্য যে, Cleaning Wipe দিয়ে আপনি স্মার্টফোনের সকল সাইট পোর্টস সহ ক্লিন করতে পারলেও এই পদ্ধতিতে (ডেটল পানি) শুধুমাত্র স্ক্রিণ এবং ব্যাক পার্টটি ক্লিন করুন। ডেটল পানির মাইক্রোফাইবার কাপড়টি দিয়ে ফোনের পোর্টস অংশগুলো মুছতে গেলে সেটার ভেতর লিকুইড ঢুঁকে যাবার চান্স থাকে। পোর্টসগুলো কিভাবে পরিস্কার করবেন সেটাও নিচে বলে দিচ্ছি।

বি:দ্র: কোনো কারণে আপনার বাসায় এই ডেটল লিকুইডও যদি না থাকে তাহলে শুধুমাত্র হালকা গরম পানিতে মাইক্রোফাইবার কাপড়টি চুবিয়ে নিয়েও কাজ হয়ে যাবে তবে ততটা ইফেক্টিভ হবে না।

Cotton Buds:

ফোনের পোর্টসগুলো পরিস্কারের জন্য এই কটন বার্ডস ব্যবহার করুন। আর হ্যাঁ কটন বার্ডসকে উপরের মতো লিকুইড পানিতে চুবিয়ে নিতে হবে। পোর্টস ছাড়াও ফোনের সাইডের কোঁনাগুলো এবং ক্যামেরা বাম্পের আশেপাশেও আপনি এই বাডসগুলো দিয়ে পরিস্কার করতে পারেন।

পরিশিষ্ট:

এই লকডাউনের মধ্যেও যদি প্রয়োজনে বাইরে যাবার দরকার হয় তাহলে বাসায় এসে সবার আগে হাত ধুঁয়ে নিবেন। শরীল ফ্রেশ করার পরপরই উপরে দেখানো নিয়মমতো আপনার স্মার্টফোনটিও পরিস্কার করে নিবেন বলা তো যায় না কোথায় জীবানু লুকিয়ে থাকে। বিশেষ করে আমাদের অনেকেই রয়েছি রাস্তায় চলাফেরা করার সময় স্মার্টফোনটি পকেটের চাইতে হাতে করে নিয়ে চলতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি, তাদের জন্য স্মার্টফোনটি ক্লিন করা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। একই সাথে আপনি যদি আপনার ফোনে কেস ব্যবহার করে থাকেন তাহলে ফোনের সাথে সাথে অবশ্যই অবশ্যই কেসটিকেও একইভাবে পরিস্কার করে নেবেন। আর ক্লিন করার সময় অবশ্যই চার্জ থেকে ডিসকানেক্ট করে নিয়ে ফোনটি বন্ধ করে নিবেন। আর কখনোই ফোনকে কোনো কিছুর মধ্যে ডুবিয়ে দিবেন না, যতই ফোনে Water Resistant থাকুক না কেন।

- Advertisement -

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here