38 C
Dhaka
Tuesday, April 23, 2024

স্মার্টফোন আপগ্রেডঃ একটি ভিন্নধর্মী পর্যালোচনা

- Advertisement -

নতুন স্মার্টফোন কেনার আগে কি কি বিষয় বিবেচনা করবেন, কি কি বিষয় এ গুরুত্ব দিতে হবে, কোন কোন ভুল গুলো করা যাবে না , ইত্যাদি বিষয়ে গাইডলাইন ভিডিও, আর্টিকেলের অভাব নেই ইন্টারনেটে। আজকের আর্টিকেলে আমরাও এই বিষয়গুলো নিয়েই  আলোচনা করার চেষ্টা করেছি, তবে একটু ভিন্ন ভাবে, ভিন্ন আঙ্গিকে, ভিন্ন পন্থায় । আশা করছি যারা হাতের স্মার্টফোনটি বদলে নতুন একটি স্মার্টফোন নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন, তাদের যথেষ্ট উপকারে আসবে আজকের লেখাটি।

 

- Advertisement -

সম্পুর্ণ আলোচনাটিকে আমরা বেশ কয়েকটি পয়েন্টে ভাগ করে নিতে চাই। এই পয়েন্টগুলোর পরে কিছু সাধারণ তত্ব, সাধারণ ভুল ও সুপার টিপস ও তুলে ধরা হবে।

আপনার বর্তমান স্মার্টফোনটির দাম কত

প্রথমেই দেখতে হবে আপনি যে স্মার্টফোনটি বর্তমানে চালাচ্ছেন, অর্থাৎ যেই স্মার্টফোনটি আপনি কয়েক মাস বা কয়েক বছর আগে কিনেছিলেন,সেটি আপনি কত দিয়ে কিনেছিলেন।

বর্তমান স্মার্টফোনটির স্পেকস কি

একই সাথে এটাও বিবেচনায় নিতে হবে যে বর্তমানে আপনার হাতে থাকা স্মার্টফোনটির স্পেসিফিকেশন গুলো কি কি, তার ক্যামেরা, প্রসেসর,স্টোরেজ,অপারেটিং সিস্টেম ভার্সন এগুলোর অবস্থা কি।

- Advertisement -

আপনার পরবর্তী স্মার্টফোনের জন্য বাজেট কত

হাতের স্মার্টফোনটি বদলে আপনি যে নতুন স্মার্টফোন নিতে চান, তার জন্য আপনার বাজেট কত। এই পর্যায়ে এসে আমাদের আলোচনায় বেশ কিছু বিষয় যুক্ত হয়ে যাচ্ছে।

ধরুন আপনার ব্যবহার করা ডিভাইসটির দাম ছিল ১০ হাজার। এখন আপনি যদি সেইম বাজেটে অন্য একটি ডিভাইস নিতে চান, সেক্ষেত্রে এখানে অনেক গুলো যদি কিন্ত চলে আসতে পারে।

প্রথমত, আপনার ব্যবহার করা স্মার্টফোনটি আপনি কতদিন যাবত চালাচ্ছেন

বা সেটি কবে লঞ্চ হয়েছে। যদি সেটা ছয় মাস/এক বছর বা দেড় বছর এরকম সময় আগে লঞ্চ হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে যে আপনি একই বাজেটে যে স্মার্টফোনটি কিনতে চাচ্ছেন তা আপনার জন্য বিরাট কোনো আপগ্রেড হতে যাচ্ছে না। অর্থাৎ, আপনার স্মার্টফোনটির যে ভালো দিক ,মন্দ দিক গুলো রয়েছে,  যে ধরনের স্পেসিফিকেশন রয়েছে , ১০ হাজার এর আশেপাশে আপনি যে স্মার্টফোনটি নিবেন তাও মোটামুটি একই ধরনের সার্ভিস,পারফর্মেন্স ও স্পেসিফিকেশন এর সাথেই আসবে। এতে সম্ভাবনা রয়েছে যে আপনার বর্তয়ান স্মার্টফোনের যে যে সমস্যা রয়েছে,যেই দুর্বলতা গুলো নিয়ে আপনি অসুখী, সেগুলো কমবেশি নতুন ফোনটিতেও আপনি খুঁজে পাবেন, প্রথম থেকে না হলেও পরবর্তী কয়েক মাসের ভেতরেই।

- Advertisement -

তবে, আপনার ব্যবহার করা স্মার্টফোনটির বয়স যদি অনেকটাই বেশি হয়, তিন বা চার বছর বা এর চেয়েও বেশি হয়, তাহলে অবশ্য ব্যাপারটি ভিন্ন। নতুন স্মার্টফোনটি এক্ষেত্রে অবশ্য আপনার জন্য এক ধরনের আপগ্রেড হলেও হতে পারে। তবে সেটি যে হবেই, তাও শতভাগ জরুরি না।

তবে আপনার বর্তমান স্মার্টফোনটির দামের সাথে আপনার বাজেটের পার্থক্য যদি উল্লেখযোগ্য হারে বেশি হয়, সেক্ষেত্রেও আলোচনার ক্ষেত্রটা সম্পুর্ণ ভিন্ন দিকে চলে যাবে। সেটি আপনার জন্য তখন proper upgrade হবে কি না, তা অনেক গুলো বিষয় এর উপর নির্ভর করতে পারে ,মুলত আজকের লেখার মুল আকর্ষণটাই সেখানে।

আলোচনার পরবর্তী পয়েন্ট গুলো গুরুত্বপুর্ণ হতে যাচ্ছে। সাথে থাকুন।

আপনার বর্তমান স্মার্টফোনটির ভালো দিক

কোনো ডিভাইস ই পারফেক্ট না, একটি হোক বা একশোটি, বড় হোক বা ছোট ,হোক না মাঝারি, সমস্যা থাকবেই, দুর্বলতার দিক থাকবেই, এটাই ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের নিয়ম। একইভাবে, ভালো দিক ও কমবেশি উপস্থিত থাকবেই। হাতের স্মার্টফোনটি বাদ দেওয়ার আগে আপনার ব্যবহার এর অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু বিষয় নোট করুন। স্মার্টফোনটির কোন কোন জায়গা গুলো, কোন কোন বিষয়গুলো আপনার কাছে ডিসেন্ট/ওকে লেভেল এর লেগেছে, কোন বিষয় গুলো খুবই ভালো লেগেছে, এই স্মার্টফোনের কোন কোন পজিটিভি দিক গুলো,সুবিধার জায়গা গুলো আপনি আগামীতে যে স্মার্টফোনগুলো কিনবেন সেগুলোর সবগুলোতেই চান।

হতে পারে আপনার এই স্মার্টফোনটির ব্যাটারি ব্যাকআপ খুবই ভালো ছিল কিংবা ক্যামেরাটা অনেক ভালো ছবি তুলে , অথবা এর গেমিং পারফর্মেন্স খুবই ভালো/ ইউজার ইন্টারফেসটা খুবই চমৎকার। এটাও হতে পারে যে ফোনটি অত্যন্ত পাতলা ও হ্যান্ডি ,ডিজাইন সুন্দর।

বর্তমান স্মার্টফোনটি চালাতে যে যে সেক্টরে সমস্যা/কমতি অনুভব করেছেন

এবার একই ভাবে আরেকটি লিস্ট করার পালা, আপনার ছয় মাস ,এক বছর বা দুই বছরের অভিজ্ঞতায় এই স্মার্টফোনটি কোন কোন দিক দিয়ে সমস্যার সৃষ্টি করেছে, কমতির জায়গা গুলো কি কি ছিল,কি কি বিষয় নিয়ে আপনি বিরক্ত, এক কথায় কি কি কারণে আপনি এইটা ছেড়ে দিতে চাচ্ছেন, নতুন একটি ডিভাইসে shift হতে চাচ্ছেন।

এগুলো হওয়া অসম্ভব নয় যে-

  • হাতের ফোনটিতে হিটিং ইস্যু রয়েছে। অল্পতেই গরম হয়ে যায় ও থ্রটলিং করে।
  • ব্যাটারি ব্যাকআপ যা আছে তা আপনার জন্য যথেষ্ট নয়।
  • ক্যামেরাটি খুব একটা ভালো ছবি তোলে না।
  • আপনি একজন গেমার কিন্ত দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আপনার হাতের ফোনটির গেমিং পারফর্মেন্স আপনাকে সন্তুষ্ট করতে পারছে না।
  • ফোনটির Custom UI এর থেকে আপনার অভিজ্ঞতা জঘন্য।
  • বর্তমান ফোনটি তে যে পরিমাণ র‍্যাম রয়েছে, তা যথেষ্ট নয়, মেমোরি সবসময়ই ফুল হয়ে থাকে ও এর জন্য মাল্টিটাস্কিং করা,একসাথে একাধিক এপ্লিকেশন চালানো কঠিন হয়ে যায়।
  • স্টোরেজ দ্রুতই ফুল হয়ে যায়।

আপনার ইউজ কেস feat. Priorities

এবার সবথেকে গুরুত্বপুর্ণ একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করার পালা। আপনার স্মার্টফোনটি দিয়ে আপনি কি কি কাজ করেন, কি কি ধরনের এক্টিভিটি বেশি করে থাকেন । ভবিষ্যতে যে ফোনটি আপনি নিতে যাচ্ছেন ,সেটি দিয়েই বা কি কি কাজ আপনি করতে ইচ্ছুক।

  • আপনি একজন গেমার, ভারী ভারী গেম গুলো আপনি নিয়মিত খেলে থাকেন। কিন্ত ফটোগ্রাফি করেন বা এর দিকে তেমন আগ্রহ ও নেই, আবার মুভি ও দেখেন না তেমন। এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার প্রথম প্রায়োরিটির জায়গাটা হবে প্রসেসর+গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট এর পারফর্মেন্স।
  • আপনি মোবাইলে ফটোগ্রাফি করে থাকেন প্রচুর। শখের বশে হোক বা ক্যাজুয়াল, আপনি প্রচুর ছবি তুলে থাকেন । অন্যান্য বিষয় গুলো ,যেমন কন্টেন্ট ওয়াচিং, গেমিং করা হয় না আপনার। সেক্ষেত্রে ক্যামেরা সেন্ট্রিক ডিভাইস ই আপনার পছন্দ তালিকার শীর্ষে থাকা উচিত।
  • আপনার স্মার্টফোনে আপনি প্রচুর পরিমাণ অনলাইন কন্টেন্ট যেমন, ইউটিউব/ফেসবুক থেকে ভিডিও,মুভি,নাটক সিনেমা বা সিরিজ ইত্যাদি দেখে থাকেন। সেক্ষেত্রে ডিস্প্লে সাইজ ও ডিসপ্লের টাইপের সাথে সাথে কোয়ালিটিটাই হবে আপনার জন্য বেশি প্রযোজ্য।
  • সোশ্যাল মিডিয়া ব্রাউজিং, ক্রোম ,ফায়ারফক্স ইত্যাদি ব্রাউজারে ইন্টারনেট ব্রাউজ ও মেসেঞ্জার/অন্যান্য কমিউনিকেশন এপ এ অডিও/ভিডিও কল করার কাজেই কেবল আপনার ফোনটি ব্যবহার হয়ে থাকে।
  • আবার এরকম হওয়াটাও অসম্ভব নয় যে মিডিয়াম থেকে লাইট লেভেল এ আপনি আপনার ফোনে গেমিং,কন্টেন্ট ওয়াচিং ও ফটোগ্রাফি সবকিছুই করছেন।
  • কিংবা, প্রচুর পরিমাণ গেমিং এর সাথে সাথে ফটোগ্রাফি,কন্টেন্ট ওয়াচিং ও বেশি বেশি করে থাকেন অনেকেই।

শেষের দুইটি ক্ষেত্রে ডিসপ্লে,ব্যাটারি ব্যাকআপ, প্রসেসর ও ক্যামেরা, সবগুলোই হতে হবে পাওয়ারফুল।

টার্গেট স্মার্টফোন vs your use cases, limitations

এতক্ষণে আপনি আপনার বর্তমান স্মার্টফোনের ভালো দিক,মন্দ দিক গুলো যেমন জেনে ফেলেছেন, বাজেট ও নির্দিষ্ট করে ফেলেছেন, তেমনি আপনার ইউজ কেস সম্পর্কেও সম্পুর্ণ অবগত হয়ে গিয়েছেন। এবার স্মার্টফোন কেনার পালা। অনলাইন অফলাইন এর জনপ্রিয় শপ গুলোর ওয়েবসাইটে গিয়ে অথবা দোকানগুলোতে সরাসরি গিয়ে আপনার বাজেটে কি কি স্মার্টফোন রয়েছে সেগুলোর একটি লিস্ট করতে পারেন। তবে অনেক সময় অনেক পুরাতন কিছু মডেল ও স্টকে থেকে যায়, এই ব্যাপারে একটু সতর্ক থাকতে হবে।

শর্টলিস্ট গুলো করার সময় স্পেসিফিকেশনে নজর দিতে হবে, সাথে রিলিজ ডেটটার দিকেও লক্ষ রাখলে ব্যাকডেটেড ডিভাইস গুলোর হাত থেকে বাচা যাবে।

এবার আমরা পরবর্তী ধাপে চলে যেতে পারি, সেটা হচ্ছে এই শর্টলিস্ট করা ফোন গুলোর মধ্যে কোনটা কেমন, কোনটা আমাদের নেওয়া উচিত, কোনটাই বা জুতসই নয়। এর জন্য ইউটিউবের রিভিউ গুলোই আমাদের প্রধান ভরসার জায়গা হতে পারে। তবে রিভিউ দেখার ক্ষেত্রেও কিছু কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে, যেমন unboxing/overview নামের এই ধরনের ভিডিও গুলোতে তথ্য থাকে অত্যন্ত কম, খুবই অল্প সময় ব্যবহার করে এই কন্টেন্ট গুলো বানানো হয়। ৭/১০ দিন ইউজ করেও যে রিভিউ গুলো বানানো হয় সেগুলোর সঠিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো চ্যানেল কে অন্ধভাবে বিশ্বাস করা, শুধুমাত্র একটি চ্যানেল এর একটি ভিডিওই দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া,এই ধরনের কাজ করলে পরে পস্তানো লাগতে পারে। একই ডিভাইসের জন্য বিভিন্ন ধরনের ভিডিও দেখুন, লং টার্ম রিভিউ, ক্যামেরা কম্প্যারিজন, গেমিং টেস্ট, গেমিং পারফর্মেন্স কম্প্যারিজন,ব্যাটারি ব্যাক আপ কম্প্যারিজন এর মত ভিডিও গুলো দেখুন,বিভিন্ন চ্যানেল থেকে দেখুন।

রিভিউ গুলো দেখলে আমাদের মোটামুটি একটি ধারণা চলে আসবে যে কোন ডিভাইস এর ভালো দিক কোনটা, নেগেটিভ সাইড গুলোই বা কি কি।

এবার আমাদের কাজ হচ্ছে ডিভাইস গুলোর ইতিবাচক দিক ও নেতিবাচক দিক গুলোর সাথে একটু আগে আমরা যে নিজেদের Use-case/purpose এর তালিকা করেছিলাম সেগুলো মেলানো।

প্রথম কেসঃআপনি শুধুমাত্র গেমিং করেন, প্রচুর পরিমাণ গেমস খেলে থাকেন। সেক্ষেত্রে রিভিউ গুলোতে যেসব ডিভাইসের গেমিং পারফর্মেন্স ভালো, সাথে ব্যাটারি ব্যাকআপ ও ভালো, হিটিং ইস্যু নেই সেগুলোই হবে আপনার জন্য পারফেক্ট।

দ্বিতীয় কেসঃফটোগ্রাফির জন্য ফোন- যদি সেলফি তোলা প্রধান উদ্দেশ্য হয় তাহলে সেলফি ক্যামেরার আউটপুট যে ডিভাইসগুলোর ভালো সেগুলোকে পছন্দ করতে হবে। রেয়ার ক্যামেরা দিয়ে বেশি ছবি তুললে রেয়ার ক্যামেরার আউটপুট কে প্রাধান্য দিতে হবে।

তৃতীয় কেসঃ ইউটিউবে ভিডিও,অনলাইনে মুভি/সিরিজ স্ট্রিমিং,নাটক দেখা প্রধান কাজ হলে ডিস্প্লে কোয়ালিটি দেখুন। সাথে ডিসপ্লের সাইজকেও আপনার পছন্দের সাথে মিলিয়ে নিন।

চতুর্থ কেসঃগেমিং এর পাশাপাশি ফটোগ্রাফি বা ফটোগ্রাফির সাথে কন্টেন্ট ওয়াচিং ,কিংবা ৩টিই সমান তালে করলে প্রত্যেকটি ডিপার্ট্মেন্টের পারফর্মেন্সেই নজর দিতে হবে।

You are okay with the problems?

পারফেক্ট ডিভাইস আজকালকার যুগেও কমই পাওয়া যায়। অনেক গুলো ভালো দিকের সাথে দুই একটি কমতির জায়গাও থাকে ডিভাইস গুলোতে। ধরুন আপনার ইউজ কেইস এর সাথে একটি ফোন মিলে গেল, যেমন-

  • গেমিং এর ক্ষেত্রেই ধরুন, একটি ফোনের গেমিং পারফর্মেন্স খুবই ভালো, আবার ব্যাটারি ব্যাকআপ ,ওয়েট,ডিজাইন ও ভালো, কিন্ত ক্যামেরা খুব একটা সুবিধার না, আবার ডিসপ্লে সাইজ ও খুব বড় না।

এখন আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে এই সমস্যাগুলো কি আপনার ইউজ কেইস এর সাথে যায় কি না, বড় ডিসপ্লে কি আদৌ আপনার লাগবে? ক্যামেরার পারফর্মেন্স কি টপ নচ হওয়া আপনার জন্য খুবই জরুরি? যেহেতু আপনি খেলবেন গেম এবং ফোনটির গেমিং পারফর্মেন্স ভালো ,ব্যাটারি ব্যাকআপ ও ভালো , এটি আপনার জন্য ভালো একটি ডিল হতেই পারে।

  • আবার ধরা যাক, একটি ফোনের প্রসেসর ,জিপিইউ সেরকম স্ট্রং না, কিন্ত ক্যামেরা দিয়ে চমৎকার ছবি উঠে। সেলফি,ব্যাক ক্যামেরা সবগুলোরই পারফর্মেন্স ভালো। আরো দুই তিনটি ভালো সাইড রয়েছে ফোনটার যা আপনার ইউজ কেসকে সাপোর্ট করে। আপনার জন্য এই ফোনটিও ভালো ডিল হতে পারে।এখানেও ভেবে দেখতে হবে যে প্রসেসর যদি একটূ দুর্বল হয়েও থাকে, সেটা কি আপনার এক্টিভিটি গুলো আদৌ বাধাগ্রস্ত করবে কি না।
  • বা মনে করুন, আপনি প্রচুর পরিমাণ মুভি,সিরিজ এসব দেখেন। সেক্ষেত্রেও কোনো ডিভাইস যদি বড় ডিসপ্লে, ভালো কোয়ালিটির এমোলেড ডিসপ্লের সাথে আসে, কিন্ত গেমিং পারফর্মেন্স,ক্যামেরা যদি অতটা ভালো নাও হয় ,আপনার জন্য ডিভাইসটি কিন্ত পারফেক্ট হিসেবেই বিবেচিত হবে।
  • আর যদি আপনার ইউজ কেইস গেমিং,ফটোগ্রাফি ও কন্টেন্ট ওয়াচিং মিলিয়ে হয়, সেটার সাথে যেই ডিভাইসগুলো মিলে যাবে সেগুলোর মধ্যেই শর্টলিস্ট করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলুন।

পজিটিভ দিক গুলো কি আপনার জন্য?

একটি ফোনে প্রচুর শক্তিশালী প্রসেসর রয়েছে, গেমিং সেন্ট্রিক ফোন সেটি। সেখানে অন্যান্য জায়গা গুলোতে কমতি রয়েছে যেমন,ক্যামেরা। এখন একজন ফটোগ্রাফার এর জন্য এই ডিভাইসটি কোনো অর্থবহন করে না।

আবার আপনার প্রয়োজন ছোট ,কম্প্যাক্ট ধরনের হালকা ফোন, সেক্ষেত্রে যেই ফোনের ওয়েট বেশি,সাইজ বড়,সেটার অন্যান্য ফিচার মারাত্মক হলেও আপনার জন্য তা সেরকম উপকারী হবে না।

ফোনের ক্যামেরা খুবই মারাত্মক, অনেকগুলো ক্যামেরা দেওয়া, সেলফিও ভালো। কিন্ত আপনি একজন গেমার বা কন্টেন্ট দেখতেই ভালো বাসেন, ছবি তুলেন না একেবারেই,বা তুললেও মাঝেমধ্যে। কিন্ত ফোনটির প্রসেসর বেশ দুর্বল,ডিসপ্লে ও ভালো না, তাহলেও এই ফোন আপনার নিয়ে কাজ নেই।

আগের সমস্যাগুলোর সাথে মিলিয়ে নিন

প্রথমের দিকেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি যে আমাদের আগের ফোনের কোন কোন সমস্যা গুলো আমাদেরকে অনেক বেশি বিরক্ত করতো। র‍্যাম আর স্টোরেজ এর পরিমাণটা মিলিয়ে নিন। ব্যাটারি ক্যাপাসিটিও আপনার ইউজ কেইস এর সাথে তুলনা করে মিলিয়ে নিন। হিট হয় কি না ডিভাইসটি,ইউজার ইন্টারফেস কেমন তা সম্পর্কে ধারণা নিয়ে নিন।

সিরিজের ইমিডিয়েট নেক্সট ফোন

একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে,অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোনো সিরিজ এর ইমিডিয়েট সাকসেসর বা নেক্সট ফোনটি আগের ফোনের তুলনায় মেজর আপগ্রেড নিয়ে আসে না। প্রসেসর থেকে শুরু করে র‍্যাম,স্টোরেজ,ক্যামেরা সেটআপ , সব কিছুই মোটামুটি একই লেভেল এর থাকে। দাম কাছাকাছি হওয়ায় কোনো একটি জায়গায় যদি বড় আপগ্রেড থাকেও, অন্যান্য ক্ষেত্রে আবার ডাউনগ্রেড করে ফেলা হয়।

আপনার note xx ফোনটিতে আপনি যে যে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, এটা নিশ্চিত ধরে রাখুন তার পরবর্তী ডিভাইসটিও আপনার জন্য বিশাল কোনো সমাধান বয়ে আনবে না । কারণ ওইযে ,স্পেসিফিকেশন এ উনিশ বিশ পার্থক্য থাকে মাত্র। এসব ক্ষেত্রে ২/৩ বা ৪ জেনারেশন এর আপডেট গুলো মোটামুটি মানের আপগ্রেড হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। যেমন Redmi note 7 pro থেকে note 10 pro max মোটামুটি পারফেক্ট একটি আপগ্রেড হবে। কিন্ত Note 9 pro max থেকে 10 pro max তেমন কোনো আহামরি ভালো এক্সপেরিয়েন্স দেবে না। আবার Realme 2 pro থেকে Realme 6/7 pro আপগ্রেড হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, কিন্ত  realme 8 pro থেকে 9 pro plus মোটেও বড় কোনো আপগ্রেড হবে না। সুতরাং এই ব্যাপার গুলো মাথায় রাখতে হবে।

এমন ও দেখা গিয়েছে যে, মেজর মেজর কিছু জায়গায় ডাউনগ্রেড ও করা হয়েছে পরবর্তী ডিভাইসে.

নাম্বার গেমঃ ক্যামেরা, স্পেশাল ফিচার

এবার কিছু ফিচার,স্পেসিফিকেশন সম্পর্কিত ধোকা,মার্কেটিং আর নাম্বার গেম এর ফাঁদ সম্পর্কে আলোচনা করার পালা।

  • হাই রিফ্রেশ রেটঃ নিঃসন্দেহে ভালো ফিচার। কিন্ত আদৌ আপনার এটির দরকার আছে কি না, আপনি চালু করে রাখবেন কি না , ডিভাইসের যে ব্যাটারি ক্যাপাসিটি,তাতে হাই রিফ্রেশ রেট এ আপনার প্রয়োজন অনুসারে ব্যাটারি ব্যাক আপ সেটি দিতে পারবে কি না এই বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা ভাবনা করুন।
  • ক্যামেরার সংখ্যাঃ এটা একটা স্বাভাবিক মনস্তাত্বিক ব্যাপার যে কোনো জিনিস সংখ্যায় বেশি থাকলে একটু rich মনে হয়, শক্তিশালী,বেটার মনে হয় ও মানসিক একটা প্রশান্তি কাজ করে। শেষ ৫ বছরে স্মার্টফোন মার্কেটে আর কোনো প্রকৃত উন্নয়ন হোক বা না হোক, এই ভালোলাগা কে কাজে লাগিয়ে স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান গুলো উপর্যপুরি ব্যবসা করে নিয়েছে। ফোনে ৩টি,চারটি বা পাচটি ক্যামেরা থাকতেই পারে। কিন্ত এখানে আপনাকে প্রথমত দেখতে হবে প্রাইমারী ক্যামেরার পারফর্মেন্স কেমন। দ্বিতীয়ত, এটা ভালো করে চিন্তা করে বুঝতে হবে যে চারটি ক্যামেরা রয়েছে খুবই ভালো কথা, কিন্ত এই চারটির মধ্যে আপনার লাগবে কোনটা কোনটা, আপনি নিয়মিত, কিংবা মাঝেমধ্যে কোন কোন ক্যামেরা ব্যবহার করবেন ।
  • ৯০% ক্ষেত্রেই আমরা প্রাইমারী লেন্স টিই ব্যবহার করে থাকি। পর্যটন কেন্দ্র,বড় বড় স্থাপনা বা বিভিন্ন বড় বড় কনফারেন্স,অনুষ্ঠানে বিশাল গ্রুপের ছবি তোলার ক্ষেত্রেই কেবল মাঝে মধ্যে আল্ট্রা ওয়াইড ক্যামেরাটি কাজে আসে। তাও বেশিরভাগ মানুষ জানেন ই না যে তার ফোনে আল্ট্রা ওয়াইড ক্যামেরা রয়েছে, এটি দিয়ে কি করে ,কখন ব্যবহার করতে হয় তাও জানেন না। আর বাজেট ডিভাইস গুলোতে যে অতিরিক্ত ২টি ক্যামেরা দেওয়া হয় তা মুলত অকেজো ছাড়া আর কিছুই নয়। ৯৯% ক্ষেত্রেই মানুষ ডেপথ সেন্সিং ক্যামেরার ব্যবহার করেন না, (আর এই ক্যামেরা না থাকলেও সমস্যা নাই কারণ edge detection,depth sensing বা portrait, এগুলো সফটওয়্যার দিয়েও প্রসেস করা হয় ) । আর ম্যাক্রো লেন্স এর ব্যবহার ও অতি সামান্য, আর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই লেন্স গুলো হয় অত্যন্ত দুর্বল। প্রাইমারী ক্যামেরা জুম করে করেও সুন্দর সুন্দর ম্যাক্রো ফটোগ্রাফি করা সম্ভব। সুতরাং ক্যামেরার সংখ্যা দেখে ধোকা খাওয়ার সুযোগ নেই, এগুলো আপনার কাজে লাগবে কি না, আদৌ দরকার কি না সেটা ভেবে চিনতে তারপর সিদ্ধান্ত নিন।

***টেলিফটো,পেরিস্কোপ লেন্স গুলো কার্যকর***

  • ক্যামেরার মেগাপিক্সেলঃ মেগাপিক্সেল দিয়ে ক্যামেরা বিচার করার একটা যুগ ছিল। এখন শুরু হয়েছে হাই মেগাপিক্সেল এর যুগ। এটিও একটি বড় মার্কেটিং পলিসি, যার ফাঁদে ক্রেতারা পা দিয়ে থাকেন। প্রথমত, ধরি ১০৮ মেগাপিক্সেল এর ক্যামেরা আছে দেখে আপনি আবেগাপ্লুত হয়ে গেলেন, কিন্ত এখানে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আদৌ আপনি যখন রিয়েল টাইমে ছবি তুলেন তখন কি ১০৮ মেগাপিক্সেল এ ছবি উঠে কি না ? বা ১০৮ মেগাপিক্সেল বলেই যে ক্যামেরা খুব ভালো এরকম ভাবার ও কারণ নেই কারণ লেন্সের সাইজ, এপারচার ,সেন্সর সহ অন্যান্য অনেক বিষয় থাকে। প্রসেসর এর ও প্রভাব থাকে। সত্যি বলতে রিয়েল লাইফে রেগুলার ফটোগ্রাফি তে কেওই হায়ার রেজুলুশন এ ছবি তুলে না । কারণ এগুলো প্রসেস হতে সময় লাগে অনেক, প্রসেসর শক্তিশালী না হলে,স্টোরেজ ফাস্ট না হলে বিষয়টি সময় সাপেক্ষ হয়ে যায়। আর এই ধরনের রেজুলুশনে ছবি তুললে ছবির সাইজ গুলো ও হয় বড় বড়, স্টোরেজ দ্রুত শেষ হওয়ার সমস্যাটি থাকে । সর্বশেষ যে সমস্যাটা হতে পারে, তা হলো , হায়ার রেজুলুশনে বেশি ছবি তুলতে গেলে কিছুক্ষণের মধ্যেই ফোন গরম হয়ে যেতে পারে, ল্যাগ দিতে পারে,ক্যামেরা app স্লো হয়ে হ্যাং করতে পারে বা ক্রাশ করতে পারে।
  • বেশি র‍্যাম,স্টোরেজ এর প্রতিযোগিতাঃ ক্যামেরা ,প্রসেসর বা ব্যাটারির দিকে নজর না দিয়ে ইচ্ছামত ৮ জিবি,১২ জিবি র‍্যাম, ১২৮,২৫৬ জিবি স্টোরেজ এর ডিভাইস বেশ কিছু ব্রান্ড কে বের করতে দেখা যায় লো বাজেট রেঞ্জে। এবং মার্কেটিং ও চালানো হয় এটিকে কেন্দ্র করেই ।
  • চার্জিংঃ অন্য সব কিছু বাদ দিয়ে ৬০-৮০-১০০ ওয়াট চার্জিং সাপোর্ট কে ফোকাস করে মার্কেটিং করা হয়।
  • ১০-২০ হাজার টাকার মধ্যে মিডিয়াটেক বা UniSOC এর প্রসেসর গুলোর মার্কেটিং করা হয় আট কোর এর প্রসেসর বিশাল শক্তিশালী, অনেক ভালো পারফর্মেন্স দিতে সক্ষম এই ধরনের কথা বার্তা বলে।

 

- Advertisement -

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here