39 C
Dhaka
Thursday, April 25, 2024

শায়োমি গ্লোবাল বনাম চায়না বনাম ইন্ডিয়ান রম!

- Advertisement -

বাংলাদেশে সবার আগে একদম সস্তায় অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস নিয়ে আসে সিম্ফোনি। আর বাংলাদেশে সবার আগে “কোয়ালিটি” ওয়ালা অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস “সুলভ” মূল্যে নিয়ে আসে শাওমি। শুধু বাংলাদেশেই নয়, পাশের দেশ ভারতে এই শাওমি ব্রান্ডটি এখন আইফোন, স্যামসংয়ের থেকেও এগিয়ে রয়েছে (ইন্ডিয়াতে)। তাই এখন ইন্ডিয়ায় শাওমির কারখানা রয়েছে, রয়েছে অফলাইন স্টোর এবং সার্ভিস সেন্টার। বাংলাদেশেও সেটা আস্তে আস্তে আসছে।
শাওমি ডিভাইস কিনতে গেলে অফিসিয়াল আনঅফিসিয়ালের একটা ঝামেলা থাকে সেটা নিয়ে বেশ কিছু দিন আগে আমি একটি পোস্ট করেছিলাম, কিন্তু এছাড়াও Rom নিয়ে কিছু কনফিউশন থাকে। কারণ শাওমি সেট কিনতে গেলে Global Rom, China Rom আর বর্তমানে ইন্ডিয়ায় শাওমি ম্যানুফেকচার করছে বিধায় Indian Global Rom ও এই লিস্টে যুক্ত হয়েছে। আর বলা বাহুল যে এই তিনটি রমের ডিভাইসের মধ্যে রয়েছে দামের পার্থক্য।
শাওমির একটি ডিভাইসকে আপনি Global , China রমে বেশি দেখতে পাবেন। আর Indian Global রমে তখনই পাবেন যদি সেই ডিভাইসকে ইন্ডিয়ায় মেনুফ্যাকচার করে বাজারযাত করা হয় তবে। দামের ক্ষেত্রে সবার থেকে এগিয়ে রয়েছে গ্লোবাল রম, তারপর ইন্ডিয়ান গ্লোবাল এবং সবার শেষে চায়না রম। আনঅফিসিয়াল ভাবে কিনতে গেলে আপনি এই তিন প্রকারের রমই কিনতে পারবেন তবে অফিসিয়াল ভাবে কিনতে হলে গ্লোবাল রমেই আপনি ডিভাইসকে পেয়ে যাবেন। তো আজ কথা বলবো এদের মধ্যে কোন রমটি আপনার জন্য উপযুক্ত।

গ্লোবাল রম

গ্লোবাল রম হচ্ছে শাওমির বিশ্বব্যাপী রিলিজের রম। উল্লেখ্য যে, শাওমি একটি চীনভিক্তিক কোম্পানি। আর সেখানে তারা চায়না রম মানে তাদের ভাষায় অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের স্কিন MIUI কে ব্যবহার করে থাকে। আর বিশ্বব্যাপী লঞ্চের ক্ষেত্রে তারা ইংরেজি ভাষাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। আর এই গ্লোবাল রমগুলো আপনি শাওমি ডিভাইসের গ্লোবাল সংষ্করণে পাবেন। আর এই রমের ডিভাইসগুলো ইন্টারন্যাশনাল হিসেবে লঞ্চ করা হয় তাই এতে কোনো এক্সট্রা অ্যাপস থাকে না যেটা চায়না রমে দেওয়া থাকে। যেমন বিভিন্ন চায়নিজ অ্যাপ, ব্লটওয়্যার ইত্যাদি। একই সাথে কোনো দেশ ভিক্তিক অ্যাপ এটায় আপনি পাবেন না। তবে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাপ যেমন ফেসবুক, ইউটিউব এগুলোকে আপনি এখানে পাবেন।
আর আরেকটি মূল বিষয় হচ্ছে, এই রমে আপনি গুগলের সকল সার্ভিস পাবেন! উল্লেখ্য যে চীনে গুগল, ফেসবুক ইত্যাদি নিষিদ্ধ। তাই সেখানে তারা তাদের নিজস্ব প্লেস্টোর চালায়। আর চায়না রমে গুগলের কোনো সার্ভিসই কিন্তু নেই। তবে গ্লোবাল রমে এই সমস্যাটি নেই। ইউটিউব, জিমেইল, গুগল ডকস, গুগল শীটস, হ্যাংওভার সহ গুগলের সকল সার্ভিসই গ্লোবাল রমে থাকে। আর গুগল সার্ভিসগুলো ডিফল্ট হিসেবে দেওয়া থাকে। যেমন চায়না রমের ডিভাইসে কোনো ওয়েব সাইট লিংকে ক্লিক করলে শাওমির নিজস্ব ব্রাউজার অ্যাপে সেটা ওপেন হবে, কিন্তু গ্লোবাল রমে ডিভাইসে যেকোনো লিংকে ক্লিক করলে সেটা গুগল ক্রোমে ওপেন হবে।

- Advertisement -

তবে এটার সাথে সাথে গ্লোবাল রমে কিছু অসুবিধাও রয়েছে। যেমন এই রমে আপনি অ্যান্ড্রয়েড আপডেটগুলোকে একটু ধীর গতিতে পাবেন। মানে দেখা গেল চায়নিজ রমে ডিভাইসে এক মাস আগে একটি আপগ্রেড এলে সেই ডিভাইসের গ্লোবাল রমে ওই আপডেটটা মাসখানেক পরে আসে। আর অন্যদিকে শাওমির MIUI চায়নিজ ভিক্তিক হওয়া গ্লোবাল রমে এই UI এর অনেক ফিচার দেওয়া থাকবে না। তবে এই ফিচারগুলো ছোটখাট হয়ে থাকে তাই অতো চিন্তার কিছু নেই।

চায়না রম

গ্লোবাল রম সেকশন পড়ে ইতিমধ্যেই চায়না রমের ব্যাপারে হালকা ধারণা হয়েছে। শুধুমাত্র চীন অঞ্চলে ব্যবহারে র জন্য যেসকল ডিভাইস রয়েছে সেগুলোতে চায়না রম দেওয়া থাকে। তবে দামে কম হবার কারণে আমাদের দেশে অনেক শপই পাইকারি দরে ডিভাইসগুলো আনঅফিসিয়ালভাবে এনে দেশে বিক্রি করে থাকে। গ্লোবাল রমের থেকে দ্রুত আপডেটের পাশপাশি শাওমির অধিকাংশ ডিভাইস প্রথমে চীনে লঞ্চ হয়ে থাকে। গ্লোবাল রমে ডিভাইস কিনতে হলে আপনাকে অনেক দিন অপেক্ষা করতে হয়। যেমন Note 8 Pro চীনে লঞ্চ হয়ে গেলেও ইন্ডিয়া সহ গ্লোবালি লঞ্চ হতে আরো ৫/৬ সপ্তাহ লাগবে। একই সাথে চায়না রমে র‌্যাম ম্যানেজম্যান্ট এবং স্ট্যাবিলিটি তুলনামূলক বেশি থাকে।
তবে চায়না রমের সবথেকে সব সমস্যা হলো চায়নিজ ভাষা। ডিভাইসে ভাষা ইংরেজি করার পরেও এখানে সেখানে চায়না ভাষা থেকেই যাবে। আর চায়নিজ ব্লোটওয়্যার তো রয়েছেই। আর হ্যাঁ, গুগলের কোনো সার্ভিস আপনি এখানে পাবেন না। গুগল প্লে স্টোর থেকে শুরু করে ক্রোম, ইউটিউব, গুগল প্লে সার্ভিস ইত্যাদি সবকিছুই আপনাকে নিজে থেকে ইন্সটল করে নিতে হবে। এদের মধ্যে গুগল প্লে সার্ভিস আর প্লে স্টোর ইন্সটল করাটা একটু ঝামেলার।

ইন্ডিয়ান গ্লোবাল

গ্লোবাল রম এবং ইন্ডিয়ান গ্লোবাল রমে কোনো পার্থক্য নেই। শুধুমাত্র ইন্ডিয়ান গ্লোবাল রমে আপনি ইন্ডিয়ার নিজস্ব কিছু ব্লোটওয়্যঅর দেখতে পাবেন। যেমন PayTM, FlipKart, Vodaphone ইত্যাদি ইন্ডিয়ার ভিক্তিক অ্যাপ এই ডিভাইসে প্রি ইন্সটল থাকবে। আর মনে রাখবেন, শুধুমাত্র শাওমির “Made In India” খ্যাত ডিভাইসগুলোতেই ইন্ডিয়ান রম পাবেন।
আর মজার ব্যাপার হচ্ছে বাংলাদেশে আনঅফিয়াল ভাবে গ্লোবাল রমযুক্ত শাওমি কিনতে গেলে ৯৫% ক্ষেত্রে আপনার হাতে ধরিয়ে দেওয়া হবে ইন্ডিয়ান গ্লোবাল রমযুক্ত ডিভাইস। আর এতে কোনো সমস্যা নেই। তবে চায়না রমের মতো এখানে অতটা দামে কম পাবেন না। ইন্ডিয়ান গ্লোবাল রমের ডিভাইসগুলো সরাসরি শাওমির ইন্ডিয়ান সেক্টরটি পরিচালনা করে। তাই এতে আপগ্রেড, সার্ভিস ইত্যাদিও আপনি ইন্ডিয়ান হিসেবে পাবেন। আরেকটি কথা হচ্ছে “Made In India” খ্যাত শাওমি ডিভাইসগুলো গ্লোবালি কিংবা চায়নায় লঞ্চ সাধারণত লঞ্চ হয় না। হলে ও সেটার নাম পরিবর্তন করে দেওয়া হয়। যেমন ইন্ডিয়ায় Redmi Y2 ডিভাইসের গ্লোবাল সংষ্করণের নাম হচ্ছে Redmi S3, জনপ্রিয় K20 Pro এর গ্লোবাল নাম হচ্ছে Xiaomi 9T Pro , Mi A3 এর চায়নীজ সংষ্করনের নাম হচ্ছে CC9e ইত্যাদি।

- Advertisement -

পরিশিষ্ট

এবার আসি কোন রমটি আপনার জন্য উপযুক্ত। এখন প্রথম কনফিউশন দূর করে দিচ্ছি, সেটা হলে এই শাওমির চায়না রম এবং গ্লোবাল রমে ডিভাইসগুলোর মধ্যে হার্ডওয়্যারের দিক থেকে কোনো পার্থক্য নেই। গ্লোবাল রমে ৪৮ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা থাকলে সেই ডিভাইসের চায়না রমেও ৪৮ মেগাপিক্সেল থাকবে।
এখন কথা হচ্ছে আপনি যদি মোবাইল ডিভাইসের সফটওয়্যার নিয়ে তেমন জ্ঞান না রাখেন, প্লাস ফোনে কিভাবে রুট করে ফ্ল্যাশ করতে হয় কিংবা হঠাৎ ভাষা জনিত কোনো সমস্যা হলে সেটা ফিক্সড করতে না পারেন আর সবথেকে বড় কথা আপনি যদি আনঅফিসিয়াল ডিভাইস না কিনতে চান তাহলে গ্লোবাল রম আপনার জন্য পারফেক্ট। কারণ আপনি অফিসিয়াল ভাবে চায়না রমওয়ালা পাবেন না একমাত্র চীন ছাড়া।

অন্যদিকে আনঅফিসিয়াল সেটের বেলায় গ্লোবাল নাকি চায়না সেখানেও কিন্তু একটি কনফিউশান থাকে। সেখানেও আমার একই কথা। রম নিয়ে ঘাঁটা ঘাটিঁ করার অভিজ্ঞতা না থাকলে চায়না রম নেবার প্রয়োজন নেই। কিন্তু যারা কাস্টম রম ফ্ল্যাশ করতে পারেন। চায়নিজ ভাষায় বিজ্ঞাপন দেখলে চমকে উঠেন না। এবং নিজে নিজেই প্লেস্টোর সহ গুগলের সার্ভিসগুলো ভালো ভাবে সঠিক পন্থায় ইন্সটল করতে পারেন তারাই চায়না রম কিনতে পারেন। মানে একটু এক্সপার্ট কিসিমের লোকদের জন্য চায়না রম বেটার, কেন? কারণ গ্লোবাল রমের থেকে চায়না রমের ডিভাইসগুলোতে ১ থেকে ৩/৪ হাজার টাকার দামের পার্থক্য থাকে। আরো মজার ব্যাপার হচ্ছে শাওমির কাছ থেকে অফিসিয়াল ভাবে ডিভাইস আনলক করার পারমিশন (১৫ দিন পর) নিতে পারলে আপনি আপনার চায়নিজ রমের ডিভাইসে কোনো প্রকার ওয়ারেন্টি নস্ট করা ছাড়াই গ্লোবাল রম ইন্সটল করতে পারবেন। তাহলে কেন শুধু শুধু এক্সট্রা ২/৩/৪ হাজার টাকা খরচ কেন করবেন?

আরেকটি কথা মনে রাখবেন, Android One প্রজেক্টের আন্ডারের কোনো ফোনেই গ্লোবাল, চায়না রমের কোনো ঝামেলা নেই। সেটা শাওমি বাদে যে ব্রান্ডেরই হোক। আর Android One এর কোনো ডিভাইস চায়নায় লঞ্চ হয় না। 

- Advertisement -

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here